'বাংলার অনেক জায়গায় গ্যাংস্টারের শাসন চলছে, যা দেখছি সেটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র'
২৪ ঘন্টা | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
অয়ন ঘোষাল: সন্দেশখালিকাণ্ডে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারিতে রীতিমতো বিস্ফোরক রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গ্রেফতারের চার ঘন্টার মধ্যেই রাজভবনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বললেন, বাংলায় গুন্ডা গ্যাং আছে। তাদের বলছি দ্রুত আত্মসমর্পণ করুক। নইলে আইন নিজের পথে চলে ব্যবস্থা নেবে। আমি সতর্ক করছি, এই গুন্ডারা সারেন্ডার করুক। শাহজাহানের গ্রেফতারে সন্দেশখালির মহিলারা উচ্ছ্বসিত। তাঁরা রাজভবনের পিস রুমে ফোন করেছেন।
মুম্বই থেকে আজ বাংলায় ফেরেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। শাহজাহানের গ্রেফতার নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিমানবন্দরে বলেন, সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো। এরপর রাজভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এনিয়ে ফের সরব হন। সি ভি আনন্দ বোস বলেন, সন্দেশখালির ঘটনায় মূল অভিযুক্তের গ্রেফতারি সবার কাছে আই ওপেনার। এটা সবে শুরু। বাংলায় হিংসার সমাপ্তি ঘটাতে হবে। বাংলার অনেক পকেটে গ্যাংস্টাররা শাসন চালাচ্ছে। এটা এখনকার ঘটনা নয় এটা চলেই আসছে , অনেকদিন ধরে। আমরা যেটা দেখছি সেটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমি ফিল্ডে গিয়ে দেখেছি, নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি গুন্ডারাজ ভীষণভাবে বর্তমান। বাংলার অনেক জায়গাতেই এটা চলছে। কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর শেষ হওয়া উচিত। আগামী দিনে এটাই পাখির চোখ হওয়া উচিত।শাহজাহানের গ্রেফতারি কি অনেক দেরি হয়ে গেল?রাজ্যপাল বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি ধৈর্য রাখা উচিত। দেরি হলেও ন্যায় হয়েছে। কিছুদিন নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এটা ব্লেম গেম এর সময় নয়। সরকারের তরফে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা দেখা উচিত সরকারের। এখন অ্যাকশনের প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। কালপ্রিট ধরা পড়েছে। অন্যান্য যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। রাজ্যপাল হিসেবে আমার পরামর্শ সব গ্যাংস্টারের আত্মসমর্পণ করা উচিত। তারা নিজে থেকে আত্মসমর্পণ করুক। না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আইন ভঙ্গকারীদের আইনি নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার আমরা দিতে পারি না। একটা সভ্য সমাজে এই ধরনের আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। যেমনটা বাংলায় হয়।শাহজাহানের গ্রেফতারির পরই সন্দেশখালিতে উত্সব শুরু হয়ে যায়। চলে মিষ্টিমুখ। রাজ্যপাল বলেন, আজকের গ্রেফতারের খবর আসার পর থেকেই সন্দেশখালির মহিলারা ফোন করেছেন রাজভবনে। তারা উচ্ছ্বসিত। তারা ভেবেছিলেন এটা হবেই না। এখন তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তারা সফলভাবে প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিলেন। সভ্য সমাজ, সরকার সহ সব স্টেক হোল্ডার, মিডিয়া, সবার দেখা উচিত যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা সমাজে না ঘটে। সন্দেশখালির মহিলারা শান্তিতে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান। সেটাকে রিস্টোর করা উচিত। রাজ্যপাল হিসেবে আমি কোন আল্টিমেটাম দিতে পারি না। রাজ্যপালের কাজ হল নির্বাচিত সরকারকে সহযোগিতা করা। রাজ্যপালের কাজ সরকারের রোড ব্লক করা নয়। সরকারের তরফে কিছু ত্রুটি হয়েছে। সেটা আমরা দেখছি। এই ঘটনাটা একটা আই ওপেনার হিসেবে কাজ করবে। আমি মাঠে নেমে দেখেছি, গুন্ডাগ্যাং আছে। বাংলার বিভিন্ন অংশে আছে। যেমনটা ইংল্যান্ডে ছিল অতীতে। আমাদের একজোট হয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে। গ্যাংস্টারদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া উচিত। যদি তারা আত্মসমর্পণ না করেন, তাহলে আইন তাদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নিক। এটাই হলো আমার অ্যাকশন প্ল্যান। এটা সবে শুরু। এখন দৌড় অনেক বাকি আছে। তার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।