• Sheikh Shahjahan : নষ্ট হতে পারে নথি, কোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ ইডি-র
    এই সময় | ০১ মার্চ ২০২৪
  • সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে নিগৃহীত হওয়ার পরেই প্রকাশ্যে এসেছিল এই মামলায় রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় এজেন্সির টানাপড়েন। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য পুলিশ হোক অথবা ইডি বা সিবিআই—যে এজেন্সিই পাবে, সে-ই গ্রেপ্তার করতে পারবে সন্দেশখালির দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতাকে।বৃহস্পতিবার কাকভোরে সেই শাহজাহান রাজ্য পুলিশের জালে ধরা পড়ার পরে দুই এজেন্সির মধ্যে সংঘাতের আবহ ফের সামনে চলে এল। ন্যাজাট থানার মামলায় বসিরহাট মহকুমা আদালত শাহজাহানকে ১০দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। এদিন সকালে যখন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার শাহজাহানকে গ্রেপ্তারির বিষয়টি সাংবাদিক বৈঠক করে জানাচ্ছেন, তখনই ইডি ওই অভিযুক্তকে রাজ্য পুলিশের হেফাজত থেকে সেন্ট্রাল এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।আবার হাইকোর্টে যখন এই আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি জানাচ্ছে ইডি, তখন বসিরহাট থেকে শাহজাহানকে পুলিশি কনভয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজ্য পুলিশের হেড কোয়ার্টার্স ভবানী ভবনে। ইডির উপর হামলার ঘটনার তদন্তভার এদিনই তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সিআইডির হাতে।এর আগে ন্যাজাট থানার মামলার তদন্তে রাজ্য পুলিশ ও সিবিআইয়ের অফিসারদের নিয়ে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় ইডি। সেই মামলাটির পরবর্তী শুনানি ধার্য আছে আগামী ৬ মার্চ। তবে তার আগেই শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশ গ্রেপ্তার করায় জরুরি ভিত্তিতে ওই শুনানি করার জন্য এদিন প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয় ইডি।ইডির কৌঁসুলি ধীরাজ ত্রিবেদী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘সিট গঠন সংক্রান্ত মামলাটি ৬ তারিখ শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু আগামী ছ’দিন শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতে রেখে ওই মামলার তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য-নথি নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ইডির চ্যালেঞ্জ মামলাটি আজ, শুক্রবারই জরুরি ভিত্তিতে শোনা হোক।’আদালত অবশ্য এদিন এই ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দেয়নি। বৃহস্পতিবারই বিকেলের দিকে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কলকাতা ছাড়েন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বসার কথা আগামী সোমবার। ফলে তার আগে ইডির আর্জি শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সন্দেশখালি নিয়ে হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলাটিরও শুনানির কথা রয়েছে ওইদিনই।এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ইডি অফিসারদের নিগ্রহ সংক্রান্ত মামলায় লঘু ধারা দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল এই কেন্দ্রীয় এজেন্সি। নজিরবিহীনভাবে তারা এই ঘটনায় প্রেস বিবৃতিও দেয়। আবার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ রাজ্য পুলিশ ও সিবিআইয়ের অফিসারদের নিয়ে সিট গঠনের নির্দেশ দিলেও সেটা চ্যালেঞ্জ করে ইডি। ন্যাজাট থানার মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি বুধবারও হাইকোর্টে করেছিলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এসভি রাজু।আবার রাজ্যের শাসক দলের বক্তব্য ছিল, হাইকোর্টের নির্দেশই রাজ্য পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কেন ইডি শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করছে না, সে প্রশ্নও তুলেছিল রাজ্য পুলিশ। এদিন শাহজাহানের গ্রেপ্তারির পরে সুপ্রতিমও বলেন, ‘উচ্চ আদালতে রাজ্য পুলিশের তদন্তের উপরে স্থগিতাদেশ ছিল। আইনি বাধার কারণে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আমাদের উপর আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল ঠিকই। কিন্তু ইডি-র উপরে সেই বাধ্যবাধকতা ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে উদ্যোগী হয়নি কেন, সেই প্রশ্নটাও আমার মনে হয় প্রাসঙ্গিক আছে। সেই প্রশ্নটাও উঠা উচিত।’প্রবীণ পুলিশকর্তারা মনে করছেন, লগ্নিসংস্থার মামলার মতো রাজ্য ও কেন্দ্রীয় এজেন্সির মধ্যে আরও টানাপড়েন হতে চলেছে এই মামলাতেও। ইডি সূত্রের দাবি, শুধু তাদের উপর হামলা সংক্রান্ত ন্যাজাট থানার মামলাগুলি নয়, তারপরে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে জমি দখল, ধর্ষণ-সহ যে সব মামলা রুজু হয়েছে, সেই মামলাগুলির তদন্তভারও যাতে সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়, আগামী দিনে তেমন আর্জিও জানানো হতে পারে।পাশাপাশি এই মামলাগুলির বিচারপ্রক্রিয়া বসিরহাট থেকে তো বটেই, এমনকী ভিন রাজ্যে সরানোর মতো আবেদনও জানানো হতে পারে তাদের তরফে। এক্ষেত্রে সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে নিগ্রহের ঘটনার পাশাপাশি এই মামলার আর এক অভিযুক্ত শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতে অভিযানে গিয়ে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনাকে যুক্তি হিসাবে হাতিয়ার করা হতে পারে।
  • Link to this news (এই সময়)