'ওর মুখ দেখতে চাই না,' বললেন সন্দেশখালির গ্রামবাসী
এই সময় | ০১ মার্চ ২০২৪
এখন হোলি নয়। তিন সপ্তাহেরও বেশি বাকি। এখন দীপাবলিও নয়। বাকি সাত মাসেরও বেশি। তবু বৃহস্পতিবার একই সঙ্গে হোলি ও দীপাবলিতে মাতল সন্দেশখালি। আবির খেলে, বাজি পুড়িয়ে। শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তার হওয়ার আনন্দে অকাল দীপাবলি ও অকাল হোলি। উৎসবের আনন্দে এ দিন মাতোয়ারা ওঁরা সবাই— সন্দেশখালির সাধারণ মানুষ, যাঁদের একটা বড় অংশ মহিলা।এতদিন যাঁরা শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। এতদিন যাঁরা শাহজাহানের গ্রেপ্তারির দাবিতে সরব হয়ে পথে নেমেছিলেন। এ দিন শাহজাহানের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেতেই ওঁদের যেন মুক্তির আনন্দ। সেই আনন্দ উদযাপনে সন্দেশখালির সেহারা, নিত্যবেড়িয়া, রামপুর-সহ বেশ কিছু তল্লাটের বাসিন্দাদের অনেকে মিষ্টিমুখ করলেন। পুড়ল বাজি, উড়ল আবির।সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা গ্রেপ্তার হওয়ার পর যাতে উত্তেজনা না-ছড়ায়, সে কথা মাথায় রেখে এ দিন বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, তাঁদের আন্দোলনেরই সুফল ৫৫ দিন পর, বৃহস্পতিবার শাহজাহানের গ্রেপ্তার হওয়া। যে কারণে এ দিন খুশির হাওয়া।খুশি মনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আবিরে একে অন্যকে রাঙিয়ে দিয়ে মিষ্টিমুখ করে এই জয়ের দিনটাকে তাঁরা উপভোগ করলেন। কথা হচ্ছিল সন্দেশখালির মধ্যবয়সি এক মহিলার সঙ্গে। তাঁর মুখ ঢাকা পড়েছে আবিরে। ওই মহিলার কথায়, ‘আজ আমাদের জয়ের দিন। জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া থেকে আমাদের গ্রামের মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করা নেতা শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমরা ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ও যেন আর কোনও দিন সন্দেশখালিতে ফিরে না-আসে। আমরা ওর মুখ দেখতে চাই না।’ভোলাখালির এক আদিবাসী বৃদ্ধা বলছিলেন, ‘এই এলাকায় শিবু, উত্তমরা আমাদের উপর নানা ভাবে অত্যাচার করত। ওদের মাথা ছিল শেখ শাহজাহান। আজ পুলিশ ওকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা তো আনন্দ করবই।’ ওই বৃদ্ধার সংযোজন, ‘আমরা আমাদের জমি ফেরত পেয়েছি। আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি। তাই, আজ আমাদের আনন্দের দিন।’ সন্দেশখালির খুলনা এলাকার এক যুবকের কথায়, ‘আজ এলাকার মানুষ মুক্তি পেল।’তবে মুক্তির আনন্দেও সবাই পুরোপুরি নিশ্চিন্ত নন। তাঁদের অনেকেরই মনে এখনও সংশয়। যে কারণে এখনও অনেকে নিজেদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, শেখ শাহজাহান গ্রেপ্তার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও এলাকায় অধরা শাহজাহানের শাগরেদ বেশ কয়েক জন নেতা। তাঁদের অত্যাচারেই অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন।সেই তালিকায় নাম রয়েছে সন্দেশখালির সরবেড়িয়া আগরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা, বেড়মজুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিদ্দিক মোল্লা, শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন-সহ কয়েক জন। সবাই পলাতক এখনও পর্যন্ত। শাহজাহান গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ বার তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্দেশখালির বেড়মজুর ঝুপখালি এলাকার মহিলারা গর্জে ওঠেন অভিযুক্ত ফেরার ওই নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে।