'আমাদের জন্যই তো ধরা পড়ল!' কৃতিত্বের দাবি শাসক-বিরোধীর
এই সময় | ০১ মার্চ ২০২৪
শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ-প্রশাসন রাজধর্ম পালন করেছে বলে মনে করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। একইসঙ্গে শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের কৃতিত্ব প্রকারান্তরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছে তারা। তৃণমূলের যুক্তি, রবিবারই অভিষেক বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, কীভাবে আদালত হাত-পা বেঁধে রেখেছে পুলিশের।অর্থাৎ, তদন্তের ক্ষেত্রে আদালতের স্থগিতাদেশের কারণেই অভিযুক্ত শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারছিল না পুলিশ। অভিষেক স্পষ্ট করে এ কথা বলার পরই আদালত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে। তৃণমূলের ব্যাখ্যা, এর তিনদিনের মাথায় শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে রাজ্য পুলিশ বুঝিয়ে দিয়েছে রাজধর্ম পালনের পথে তারা অবিচল। যদিও শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের কৃতিত্ব কোনওভাবেই তৃণমূল সরকার বা অভিষেককে দিতে চাইছে না রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।দলের শীর্ষ নেতাদের দাবি, তাঁদের আন্দোলনের চাপেই শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার এদিন সন্দেশখালির ঘটনার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিবিআইকে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।বৃহস্পতিবার সকালে মিনাখাঁ থানার বামনপুকুর এলাকা থেকে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে খবর প্রকাশ্যে আসতেই নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পোস্ট করেন, 'আদালতের বাধা ছিল, পুলিশ কাজ করতে পারেনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পুলিশ বাধা সরিয়েছে। পুলিশ যা করার করেছে।'কুণালের কথায়, 'মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের একটি অংশের জন্যই পুলিশের হাত-পা বাঁধা ছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পরই আদালত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়। তার তিনদিনের মাথাতেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে শাহজাহানকে।' রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, 'ধন্যবাদ জানাই অভিষেককে। তিনি রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে কোর্টের রক্ষাকবচের বিষয়টি যদি সবার সামনে না আনতেন, তা হলে এই গ্রেপ্তার সম্ভব হতো না।'জোড়াফুল মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের এক দিন আগে শাহজাহানকে কোনও কেন্দ্রীয় এজেন্সির বদলে রাজ্য পুলিশই গ্রেপ্তার করে ফেলায় এই ইস্যুতে বিজেপির রাজনীতি করার সুযোগ মাঠে মারা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েনের যুক্তি, 'নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য সফর পর্যন্ত ইস্যুটি জিইয়ে রাখতে চেয়েছিল বিজেপি। ওরা এখন হতাশ। বিজেপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে অনেকে জলস্পর্শও করছেন না বলে আমি শুনেছি। বিজেপি ১০ মার্চ পর্যন্ত এই ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে চেয়েছিল। তাই এখন সিবিআই-এর কথা বলা হচ্ছে। কারণ, শুক্রবার রাজ্যে মোদী আসছেন।'তবে শাহজাহানের গ্রেপ্তারের পর এই বিতর্কে ইতি পড়ে গিয়েছে বলেই তাঁর বিশ্বাস। এই প্রসঙ্গে ব্রাত্যর টিপ্পনি, 'প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বিজেপি খবর তৈরি করতে চাইছিল। ইস্যু বাঁচিয়ে রাখতে চাইছিল। উনি (প্রধানমন্ত্রী) এসে দেখবেন, যে কোনও খবর নেই। সন্দেশ শব্দের অর্থ হলো খবর, উনি এসে দেখবেন সন্দেশ-খালি! খবর নেই।'শাহাজাহানের গ্রেপ্তারিকে বিজেপি অবশ্য নিজেদের সাফল্য হিসেবেই প্রজেক্ট করতে চাইছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'শাহজাহান গ্রেপ্তার হয়েছে বিজেপির লাগাতার আন্দোলনের চাপে। রাজ্য সরকার তো মানতেই চাইছিল না, এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে। আমরা বলেছিলাম, তৃণমূল সরকারকে বাধ্য করব শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে। সেটা আমরা করে দেখিয়েছি।'একই অভিমত বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও। এদিন সন্দেশখালি যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, 'বিজেপির আন্দোলনের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যেভাবে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি, সেই চাপেই পুলিশ বাধ্য হয়েছে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে। তবে এখনও লড়াই শেষ হয়নি। দোষীদের কঠোরতম শাস্তির জন্য সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন।'সিপিএম যদিও শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের কৃতিত্ব সাধারণ মানুষকেই দিচ্ছে। এদিন উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটে সভা করে বামফ্রন্ট। সেখানে শাহজাহানের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা শাহজানকে মানুষের আন্দোলনের চাপেই গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। এতদিন পুলিশ ওকে স্যালুট করছিল।'