পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কাকা-ভাইঝির বলে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করেছিলেন জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবী। কিন্তু শুক্রবার ইডির তরফে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হলো, ওই দু’জনের সম্পর্কের জটিল রসায়ন এখনও তদন্তকারীদের কাছে অধরা। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সন্তান দত্তক নেওয়ার ইচ্ছাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্থ। জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে সেই সন্তানের দেখভাল করবেন তিনিই।এদিন ইডির কৌঁসুলি ফিরোজ এডুলজির সওয়াল, অর্পিতা-সহ একাধিক ব্যক্তিকে দুর্নীতি সংগঠিত করতে ব্যবহার করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেজন্য অর্পিতার ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু থেকে কাকুতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ীই অর্পিতা কাজ করতেন। গোয়া ও থাইল্যান্ডে অর্পিতার সঙ্গে জনৈক স্নেহময় দত্তকে পাঠিয়েছিলেন পার্থ।এডুলজির বক্তব্য, ‘এই দু’জনের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল জানি না। কিন্তু স্নেহময় দত্তর বক্তব্য পুরোটাই আদালতের সামনে রাখা হলো। এখান থেকেই তাঁদের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল, সেটা স্পষ্ট হবে।’ কটাক্ষের সুরে এই আইনজীবীর সওয়াল, ‘স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে এটা হয়তো প্রথম ঘটনা, যেখানে ৫৪ কোটি টাকার জন্য দু’জন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছেন। দু’জনেই বলছেন, এ টাকা আমার নয়, অন্যজনের।’ইতিমধ্যে ইডি পিংলার একটি স্কুল প্রতীকীভাবে বাজেয়াপ্ত করেছে বলেও আদালতে জানান আইনজীবী। তাঁর দাবি, এই স্কুলের অন্যতম ডিরেক্টর কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারী ও রীনারানি অধিকারী। তাঁরা হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যের কাকা-কাকিমা। স্কুলের জমি কেনা ও নির্মাণের জন্য নগদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন পার্থই। রাঁধুনি ও ড্রাইভারকেও তাঁর বিভিন্ন সংস্থা চালানোর জন্য ব্যবহার করেছেন পার্থ—অভিযোগ ইডি-র। অর্পিতার এক আত্মীয়কেও ড্রাইভার থেকে একটি সংস্থার ডিরেক্টর করা হয়েছিল। বোলপুরের সম্পত্তি যৌথভাবে কিনেছিলেন পার্থ-অর্পিতা। এর থেকেই ওই দু’জনের সম্পর্কের গভীরতা স্পষ্ট হয় বলেও দাবি ইডি-র।ইডি জানায়, এই মামলায় ১৬৩ জন সাক্ষী। তাতে বিচারপতির বক্তব্য, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে নিম্ন আদালতে বিচারপর্ব শেষ হওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই। ইডির দাবি, ‘আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত। হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে প্রতিদিন নিম্ন আদালতে শুনানি হতে পারে।’এদিনই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে সিবিআইয়ের হাতে থাকা পার্থ-র জামিনের মামলা। ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে বলে, ‘আপনারা এখানে স্থায়ী বাড়ি কেন নিচ্ছেন না? আপনাদের হাতে তো হাজারের উপর মামলা আছে, নাকি?’ সিবিআই জানায়, ৫০০-এর বেশি মামলা আছে। বিচারপতি বাগচীও সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান, ‘নিম্ন আদালতে কবে থেকে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে? কবে শেষ হবে?’ সিবিআইয়ের পাশাপাশি পার্থর কৌঁসুলিকেও হলফনামা জমা দিতে বলেন বিচারপতি।