• Israel Hamas War : খাবারের লাইনে হানা, গাজায় নিহত শতাধিক
    এই সময় | ০১ মার্চ ২০২৪
  • রক্ত আজকাল বড্ড সস্তা হয়ে গেছে...। আমাদের রক্তের কোনও দামই আর নেই — বলছিলেন উয়ুসরি আল-ঘৌল, প্যালেস্তিনীয় নভেলিস্ট ও চিকিৎসক। তিনি রোজকার মতো বৃহস্পতিবারও একটু খাবার পাওয়ার আশায় দক্ষিণ-পশ্চিম গাজ়ার যেখানে ত্রাণ বিলি করতে ট্রাক আসে, সেখানে গিয়েছিলেন। তখন ভোর সাড়ে চারটে। সেখানে হঠাৎই গুলি ছুটে আসতে থাকে ইজ়রায়েলি সেনার তরফে।মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মহিলা-শিশু-বৃদ্ধ সহ সাধারণ মানুষ। আল-রশিদের রাস্তা মুহূর্তে রক্তে লাল হয়ে যায়। গুলি ছুটে আসতে থাকে স্নাইপারদের থেকেও। এখনও পর্যন্ত এই হত্যালীলায় প্রাণ গিয়েছে ১০৪ জন না-খেতে-পাওয়া প্যালেস্তিনীয়র। আহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের ১৪৬তম দিনে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৩৫ জন ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে ১৮ বছরের নীচে যারা প্রাণ হারিয়েছে তার প্রায় ৪৩ শতাংশ!লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার কথায়, ‘ট্রাকে করে ময়দা আসছিল। সেটাই আনতে গেছিলাম। বাচ্চাগুলো খেতে পায় না কত দিন। কিন্তু ফিরলাম সঙ্গীসাথীদের দেহ নিয়ে। ইজ়রায়েলের সেনারা বেপরোয়া ভাবে গুলি চালাল। সামান্য কোনও ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা পর্যন্ত ছিল না।’ আর এক ব্যক্তির কথায়, ‘চারপাশে মৃতদেহ পড়ে। আহতরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাও গুলি বন্ধ হয়নি। যতক্ষণ না আমাদের মতো বুভুক্ষু মানুষগুলো ওখান থেকে সরে এসেছি।’উয়ুসরির কথায়, ‘আমার চোখের সামনে স্নাইপাররা ১০ জনকে মেরে ফেলল... তাঁরা শুধু খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’ মাথা, বুক ও হাঁটু লক্ষ্য করে গুলি চলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আল জাজ়িরার সেখানকার রিপোর্টারের কথায়, ‘কাছের দু’টো হাসপাতালের কোথাও আর ঠাঁই নেই। মেঝেতে শুইয়ে আহতদের চিকিৎসা চলছে। কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন চিকিৎসকরা। নরকের থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছেন গাজ়াবাসী।’আর এক সাংবাদিকের কথায়, ‘এটা ম্যাসাকার। না খেয়ে রয়েছেন গাজ়ার বাচ্চা-বুড়ো সকলেই। সেখানে এমন ভয়াবহ আক্রমণ সাধারণ মানুষের উপরে।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ওই জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারেনি। কারণ, সেখানে যাতে আর কোনও গাড়ি বা যানবাহন ঢুকতে না পারে, সে জন্যই নেতানিয়াহুর সেনারা সেই রাস্তা ধ্বংস করে দিয়েছে।তাই ট্রাকে করেই কিছু আহতকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আবার কাউকে কাউকে দু’টো বাঁশের মধ্যে চাদর বেঁধে স্ট্রেচারের মতো তৈরি করে নিয়ে গিয়েছেন আত্মীয় বা পড়শিরা। এমন ঘটনায় স্তম্ভিত বিশ্বও। এমনকী ইজ়রায়েলের ‘ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ আমেরিকাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, ‘যে গণহত্যার লক্ষ্যে ইজ়রায়েলের এমন অমানবিক হত্যা, তা নিন্দা করার কোনও ভাষা আমার জানা নেই। আমি শুধু বলব, সারা বিশ্ব কি এর পরেও চুপ করে থাকবে?’ নেতানিয়াহুর দেশ কিন্তু নির্বিকার। বরং সে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী বলেছেন, ‘এই রিলিফ ট্রাকগুলোর জন্য আমাদের সেনাদের জীবন-সংশয় হচ্ছে। তা ঢোকা এখনই বন্ধ করা হোক।’তাঁর দাবি, যাঁরা খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের উপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়াতেই এই ঘটনা! এখানে সেনার কোনও দায় নেই। অথচভিডিয়ো ও উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট কী ভাবে ট্যাঙ্ক ও স্নাইপার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইজ়রায়েল। সেই মানুষগুলোর উপর, যাঁরা অভুক্ত, ক্লান্ত, হতোদ্যম।
  • Link to this news (এই সময়)