• সাত বছরের নাতনির সূত্র খুঁজে বাড়ি ফেরানো হল স্টেশনে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধাকে...
    আজকাল | ০১ মার্চ ২০২৪
  • মিল্টন সেন, হুগলি:‌ টানা সাত দিন কথা ‌বলে বৃদ্ধার মুখে একমাত্র নাতনির নাম শুনেছিলেন। আর শুনেছিলেন নাতনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে দুর্গাপুরের কোনও স্কুলে। সেই সূত্র ধরেই খোঁজ শুরু করেন পুলিশকর্মী সুকুমার উপাধ্যায়। বৃদ্ধার দুর্দশা দেখে থাকতে পারছিলেন না তিনি। লক্ষ্য ছিল অসহায় বৃদ্ধাকে কোনওভাবে বাড়িতে ফেরানো। মাস দুয়েক আগে নবদ্বীপ থেকে এক নিত্যযাত্রী পুলিশ কর্মী সুকুমার উপাধ্যায়কে জানান ব্যান্ডেল স্টেশনের সাত নম্বর প্লাটফর্মে এক বৃদ্ধাকে তিনি পড়ে থাকতে দেখেছেন। সুকুমার এর আগেও এই ধরনের বহু অসহায় মানুষকে ঘরে ফিরিয়েছেন। বরাবরই ভালবেসে মানুষের পাশে দাঁড়ান চন্দননগর কমিশনারেটের কনস্টেবল সুকুমার। আর তা জেনেই ওই নিত্যযাত্রী তাঁকে ফোন করেন। খবর পাওয়ার পর থেকেই ডিউটি শেষ করে রাতে বাইক চালিয়ে ব্যান্ডেল স্টেশন যান সুকুমার। বৃদ্ধাকে খুঁজে তাঁর বাড়ি, নাম জানার চেষ্টা করেন। কথা বলে বুঝতে পারেন বয়সের ভারে ও অবহেলায় বৃদ্ধার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেক কিছুই মনে করতে পারছেন না। তবুও অনেক চিন্তাভাবনার পর বৃদ্ধা জানান তার নাম রীনা পাল। বাড়ি দুর্গাপুরের ফরিদপুরে। দিন পাঁচেক সুকুমার টানা দেখা করেন বৃদ্ধার সঙ্গে। খাবারও দিয়ে আসতেন বৃদ্ধাকে। আর গল্পের ছলে বৃদ্ধার থেকে জানার চেষ্টা করতেন তাঁর ছেলের নাম, কোথায় থাকে ইত্যাদি। কিন্তু রীনা দেবী ছেলের নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি। একদিন কথায় কথায় বৃদ্ধা জানান তাঁর এক নাতনি আছে, নাম মিষ্টু। বেনাচিতির একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। সুকুমার দুর্গাপুরে তাঁর সহকর্মীদের কাছে বৃদ্ধার ছবি পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। বেনাচিতিতে বারোটি স্কুলে চলে খোঁজ। অবশেষে খুঁজে পাওয়া যায় বৃদ্ধার নাতনিকে। সেই সূত্র ধরে মেলে বৃদ্ধার ছেলের খোঁজ। এদিকে হুগলি জেলা প্রশাসন থেকে বৃদ্ধার দুর্দশার খবর পেয়ে চুঁচুড়া আরোগ্য তাঁকে চিকিৎসার জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। একইসঙ্গে হুগলি জেলা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার দপ্তর থেকেও বৃদ্ধার বাড়ি এবং তাঁর ছেলের খোঁজ চলতে থাকে। বৃহস্পতিবার সুকুমার চুঁচুড়া আদালতে কর্মরত ছিলেন। তখন ফোনে সহকর্মীর থেকে তিনি বৃদ্ধার বাড়ি এবং ছেলের খোঁজ পান। জানতে পারেন, জামুরিয়া থানা এলাকায় রীনা দেবীর বাড়ি ছিল। স্বামী প্রয়াত। কয়েক বছর আগে ছেলে তাঁর মায়ের যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করে। মাস তিনেক আগে সে নিজেই তাঁর মাকে ব্যান্ডেল স্টেশনে ছেড়ে যান। এর আগেও একবার ছেলে তাঁর মাকে বেনারসে ছেড়ে এসেছিলেন। এই তথ্য জানার পর সুকুমার পৌঁছন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসে। জানান, বৃদ্ধার বাড়ির খোঁজ তিনি পেয়েছেন। এরপর অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল বৃদ্ধাকে বাড়ি ফেরানোর নির্দেশ দেন। পুলিশকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সঙ্গে যেতে বলেন। নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে দুটি গাড়ি করে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসের অফিসার, আরোগ্যর কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ দত্ত ও পুলিশকর্মী সুকুমার উপাধ্যায় বৃদ্ধাকে নিয়ে দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাতে বৃদ্ধাকে বাড়িতে পৌঁছে শুক্রবার ভোর চারটে নাগাদ ফিরে আসেন চুঁচুড়া। ছবি:‌ পার্থ রাহা
  • Link to this news (আজকাল)