সরকারি স্কুলকে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র রূপ দিয়ে তাক লাগালেন প্রধান শিক্ষক...
আজকাল | ০১ মার্চ ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোবাইল ফোনে কিউআর (QR) কোড স্ক্যান করে এবার পড়াশোনা করতে পারবেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীরা। পাওয়া যাবে স্কুলের প্রায় জন্মলগ্নের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য এবং নথি। আজকের ডিজিটাল যুগে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রথম স্কুল হিসেবে ৩০ নং আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ পরিণত করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত। স্কুলের সামনে নোটিশ বোর্ডে রাখা কিউআর কোডগুলো স্ক্যান করে যে কেউ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি বইগুলোর পিডিএফ ‘ভার্সন’ পেয়ে যাবেন। প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত স্কুলের ১৬৫ জন ছাত্রছাত্রীকে গণতন্ত্রের পাঠ দিতে স্কুলের মধ্যে শিশু সংসদ নির্বাচন, ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার সহ একাধিক উদ্ভাবনী কাজ করে মোবাইলমুখী সমাজকে বইপ্রেমী করে তোলার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের পুরস্কার। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘সরকারের তরফে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে একটি করে পাঠ্যবই দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই অনেক ছাত্রছাত্রী সেই পাঠ্যবই ছিঁড়ে ফেলে। পাশাপাশি বছরের শুরুতেই অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠ্যবই এসেও পৌঁছায় না। ছাত্র–ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য সরকারের তরফ থেকে শিক্ষকদের আলাদা করে কোনও বই দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘এখন প্রায় সকলের কাছেই স্মার্টফোন রয়েছে। ছাত্র–ছাত্রীদের এই সমস্ত সমস্যার কথা বুঝতে পেরেই মাথায় প্রথম আসে কিউআর কোড স্ক্যান করে তাদের কাছে যদি পাঠ্যবই দেওয়া যায় তাহলে সারা বছর তারা যেখানেই থাকুক না কেন পড়াশোনা করতে পারবে।’ যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্রায় একমাস ধরে রাত জেগে পরিশ্রম করে বিশ্বজিৎবাবু সমস্ত পাঠ্য বইয়ের পিডিএফ ‘ভার্সন’ তৈরি করে সেগুলোর কিউআর কোড তৈরি করেছেন এবং সেই কিউআর কোড ‘ফ্লেক্স’ হিসেবে ছাপিয়ে স্কুলের সামনে সকলের জন্য রেখে দিয়েছেন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘কিউআর কোড স্ক্যান করে বইগুলোর পিডিএফ ‘ভার্সন’ যে কেউ নিজের মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। তার ফলে বাড়িতে না থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা বেড়াতে গেলে বাবা–মায়ের মোবাইল ফোন দেখে পড়াশোনা করতে পারবে।’ বইয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য এবং নথিও ডিজিটাইজ করে ফেলেছেন তিনি। জানা গেছে, ১৯৪২ সালে এই বিদ্যালয় তৈরি হলেও ১৯৪৮ এর পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যাবতীয় নথি ‘ডিজিটাইজ’ করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু জানান, ‘অনেক সময় অপরিচিত ব্যক্তিরা এসে এই স্কুলের পুরনো ছাত্র বলে দাবি করে জন্ম সার্টিফিকেট বা অন্যান্য নথি চান। একাধিকবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন থেকে স্কুলের সামনে ডিসপ্লে বোর্ডে রাখা কিউআর কোড স্ক্যান করলেই জানা যাবে কত সালে কোন ছাত্র–ছাত্রী এই স্কুলে পড়েছে এবং তার জন্ম তারিখ কত এবং অন্যান্য তথ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলের এই ডিজিটাল নথিভান্ডারে রাখা রয়েছে অজস্র ছবি, খবরের কাগজের ক্লিপিং, স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তথা সরকারি কাজের জন্য দরকারি আরও প্রচুর নথি।’ এই কাজের জন্য কোনও অর্থ সাহায্য নেননি বলে জানান বিশ্বজিৎ দত্ত।