পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ফের বিপত্তি। ১২ শতকের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে ফের একবার ফাটল দেখা গেল। জানা গিয়েছে, রত্ন ভাণ্ডারে এই ফাটলের কথা জানিয়েছে ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ (ASI)।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পুরীর মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের উত্তর দিকের দেওয়ালে ফাটল দেখা গিয়েছে। যা মন্দিরের পরিকাঠামোয় ক্রমশ প্রভাব ফেলছে। সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, এই ফাটলের জেরে মন্দিরের ভিতরের অংশে জল লিক করছে। ফাটল থেকে চুঁইয়ে জল পড়ছে।গত বছর নভেম্বর মাসে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের লেজার স্ক্যানিং করে ASI। রত্ন ভাণ্ডারের ৪৯টি অংশ এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সেই অংশের দেওয়ালে কোনও ফাটল রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্যই এই স্ক্যানিং করেছিল ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ। বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের পর এই লেজার স্ক্যানিংয়ের 3D ছবি প্রকাশ করা হয়। ASI-এর পুরাতত্ত্ববিদ ডিবি গরনায়েক রত্ন ভাণ্ডারের পরিকাঠামোগত পর্যালোচনা রিপোর্ট পাঠান শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষকে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, 'দুর্বল এবং পুরনো হয়ে যাওয়া রত্ন ভাণ্ডারের বহির্বিভাগের লাইনগুলির জন্য নানা অংশে ফাটল ধরা পড়েছে। এইগুলি মেরামতির জন্য প্লাস্টার খসিয়ে ফেলতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করা হবে। এই ফাটলগুলির জেরে জলের লাইনেরও ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে। মন্দিরের ভিতরের অংশে জল চুঁইয়ে পড়ার কারণ মূলত এটাই।' এ ছাড়াও ASI রিপোর্ট অনুযায়ী, রত্ন ভাণ্ডার এবং জগমোহন বড়ার সংযোগস্থলের ঠিক নীচের অংশে অবিলম্বে মেরামতির প্রয়োজন। জল চুঁইয়ে পড়া বন্ধ করতে নির্দিষ্ট লাইনগুলি মেরামত করতে হবে বলেও জানিয়েছে ASI। রত্ন ভাণ্ডারের বাইরের দেওয়ালগুলিতেও নতুন করে প্লাস্টার প্রয়োজনীয়।
১২ শতাব্দীর এই জগন্নাথ মন্দিরে রত্ন ভাণ্ডার নিয়ে রহস্য চিরকালের। ২০২৪ সালের রথযাত্রার সময় ASI-কে এই রত্ন ভাণ্ডার খুলে তা সংস্কার করার দায়িত্বভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রত্ন ভাণ্ডার প্রথম খোলা হয় ১৯৭৮ সালে। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ফের খোলা হয় ভাণ্ডার। যদিও শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের ১৯৫৫ সালের আইন অনুযায়ী, রত্ন ভাণ্ডার পরীক্ষার অনুমতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ভাণ্ডারের ভিতর কী রয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনা হয়নি দীর্ঘকাল।
ওডিশা হাইকোর্টে একটি হলফনামা জমা করে শ্রী জগন্নাথ মন্দির টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরীর রত্ন ভাণ্ডারে মোট সোনা রয়েছে প্রায় ১৫০ কোজি। রুপোর পরিমাণ ১৮৪ কেজি। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এই রত্ন ভাণ্ডারে রয়েছে মোট তিনটি কুঠুরি। প্রতিটি কুঠুরিতেই সোনা-দানা ঠাসা। প্রথম চেম্বার বা কুঠুরিতে রয়েছে ৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা এবং ১৩৪ কেজি ৫০ গ্রাম রুপো। দ্বিতীয় কুঠুরিতে ৯৫ কেজি ৩২০ গ্রাম সোনা এবং ১৯ কেজি ৪৮০ গ্রাম রুপো। একদম শেষের কুঠুরিতে রয়েছে ৩ কেজি সোনা এবং ৩০ কেজি রুপো।