• প্রিয়জনের শোকে হাহাকার, ঢাকা অগ্নিকাণ্ডে মৃত বেড়ে ৪৬
    আজকাল | ০২ মার্চ ২০২৪
  • সমীর দে,ঢাকা: প্রাথমিক ভাবে ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, আশঙ্কা ছিল, বাড়তে পারে সে সংখ্যা। বিকেল গড়াতে জানা গেল, মৃতের সংখ্যা ৪৬। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অন্তত ১২। বাংলাদেশের রাজধানীর ঢাকার বেইলি রোড। ব্যস্ততম এই রাজধানীর মানুষদের জন্য এক ভালো লাগার সুন্দর সময় কাটানোর জায়গা। বড় বড় শপিং মল, রেস্টুরেন্ট। সময় পেলে কিংবা ছুটি নিয়ে সেখানে সপ্তাহে অন্তত একবার ঢু মারেন অনেকে। কিন্তু প্রাণোচ্ছল সেই জায়গাই এতটা ভয়াবহ হবে, কে জানত? বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে এমনই এক বহুতলে ঘটেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। তারা সবাই গিয়েছিল আনন্দ করতে, অথচ ফিরছেন মৃতদেহ হয়ে। এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও ১২ জন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীও নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।গ্রিন কোজি কটেজ নামে সাততলা এই বহুতলে ছিল নামকরা অন্তত ৫টি রেস্টুরেন্ট। রাত ১০টার ঠিক আগে তার নিচতলায় ‘চুমুক’ নামে একটি জুসের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে । ব্যস্ততম এলাকায় ওই বহুতলে ছিল না কোনও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা। জরুরি অবস্থায় বেরিয়ে আসারও কোনও ব্যবস্থা ছিল না। জানা গিয়েছে, আগুনে পুড়ে যত না মানুষ মারা গেছে, তার চেয়েও বেশি মারা গেছে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে। তিনতলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলিতে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। এমনকি সিঁড়িতেও রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।‘শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আগের দিন গেলো শপিং করতে ও তাদের এক আন্টির সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা। যাওয়ার আগে বলেছিল, বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরবো।’ এ কথা বলে কেঁদে ওঠেন বাবা কোরবান আলী। তাঁর মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকার পাড়ায় একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে এই আগুনে। ইতালি থেকে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার দেশে এসেছিলেন স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগুনে পুড়ে পুরো পরিবারের সবার মৃত্যু হয়েছে।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে ওই বহুটিকের নিচতলায় থাকা ‘মেজবানি খানা’ নামে রেস্টুরেন্টের কর্মী কামরুল হাসান বলেন, আমরা প্রথমে একটা শব্দ পেয়ে বাইরের দিকে তাকাই। তখন গেটের সামনে আগুন দেখতে পাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের ধোঁয়া পুরো বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে যায়। আমরা আর গেট দিয়ে বের হতে পারি নাই। তখন আমরা যারা রেস্টুরেন্টে ছিলাম তারা ওপরের দিকে উঠে যাই। কিন্তু সিঁড়িতে ৫ তলা পর্যন্ত উঠে আটকে যাই। আগে থেকেই অনেক লোক সেখানে ছিল।গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিবেচনায় এই ভবনটিকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এই ভবনে কোনো অগ্নি নিরাপত্তার পরিকল্পনা ছিল না।এত মৃত্যুর কারণ কী? চিকিৎসকেরা বলছেন, মৃত্যুর কারণ ‘কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং’, যাকে সহজ ভাষায় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বলা যায়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিটপ্রধান (অরেঞ্জ) প্রবীর চন্দ্র দাস বলেন, যে কয়জন মারা গেছেন, তাঁদের সবার মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁদের মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং। আহত ব্যক্তিরা আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট বদ্ধ ঘরে কালো ধোঁয়ার মধ্যে আটকে ছিলেন।
  • Link to this news (আজকাল)