খবরের বোঝা নিয়ে নয়, আলো জ্বালাতে স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে গ্রাম-শহরে ছুটছেন ডাকহরকরারা। এত দিন দুয়ারে চিঠি, পার্সেল, মানি অর্ডার পৌঁছে দিয়েছেন ডাক পিওনরা। জনজীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন। সাহিত্য, সঙ্গীতের জগতে বিশেষ চরিত্রে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এক সময়ে তাঁদেরই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনেছে গায়ের বধূরা। বহদূর থেকে আসা চিঠির কয়েকটি অক্ষর, বাক্য জীবনকে হাসি, কান্নায় ভরিয়ে তুলত।
দিন পাল্টেছে। ইন্টারনেট বিপ্লবে চিঠি লেখার দিন অতীত। এখন মূলত কিছু কেজো কাগজ সরবরাহে দিন কাটে পিয়নদের। তাতে আর উদ্বেল হয় না হৃদয়। এবার সেই পিওনরাই অন্য ভূমিকায়। মোবাইলে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ খুলে তাঁদের গৃহস্থকে প্রশ্ন করতে দেখলে চমকে যাবেন না। ডাকপিওনদের সেই প্রশ্নের সূত্রে অনেকের ঘরে পৌঁছে যাবে স্বল্প খরচায় সৌর বিদ্যুৎ।কেন্দ্রের সূর্যঘর প্রকল্পের জমি তৈরি করছেন তাঁরাই। এবার কেন্দ্রীয় বাজেটে সূর্যঘর প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘরে ঘরে সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবেন। বাকি খরচ বহন করতে হবে গৃহস্থকে। সেই কাজের সমীক্ষার জন্য বাছা হয়েছে ডাকহরকরাদের। ইতিমধ্যে তাঁদের কাছে নির্দেশও এসে পৌঁছেছে। কাজও শুরু হয়েছে।
আসানসোল পোস্টাল ডিভিশনের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুব্রত সামন্ত এই প্রসঙ্গে জানান, গোটা দেশে ২ কোটি সূর্যঘর গ্রাহক তৈরি করা হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা সাড়ে ৮ লক্ষ। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ২ কোটি মানুষকে এই সুবিধা দেওয়ার জন্য ৫ গুণ অর্থাৎ ১০ কোটি বাড়িতে সমীক্ষা চালাতে হবে। সেই সমীক্ষার কাজ করছেন পিওনরা।
ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট বলেন, ‘আসানসোল ডিভিশনে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ডাককর্মীরা ৬৮৯টি বাড়িতে গিয়ে সমীক্ষা করেছেন। তার পর মালিকদের আবেদনের ভিত্তিতে ৬৯টি বাড়িকে সূর্যঘর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ জানাচ্ছেন, ডাককর্মীদের প্রতিদিন ন্যূনতম ১০টি বাড়িতে গিয়ে সমীক্ষা করতে হবে। এই সংখ্যা প্রয়োজনে বাড়তে পারে। আগামী ৮ মার্চের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’
কী ভাবে কাজ করছেন ডাকহরকরারা? তাঁরা বাড়ির মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। কংক্রিটের অন্তত ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের ছাদ রয়েছে কিনা তা জানবেন। সেক্ষেত্রে সোলার প্যানেল বসানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে সংগ্রহ করা হচ্ছে তিন মাসের গড় বিদ্যুৎ বিল, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার নাম, বাড়ি মালিকের মোবাইল নম্বর।
এই সমস্ত তথ্য সরকারি অ্যাপে আপলোড করা হচ্ছে। ডাক বিভাগ জানাচ্ছে, এক জন ব্যক্তি মাসে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত সৌরশক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এই জন্য সোলার প্যানেল বসানোর খরচের ৬০ শতাংশ দিতে হবে গ্রাহককে। বাকি খরচ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। সংগৃহীত তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পাঠাতে হবে ডাক বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে।
একদিনে কতগুলো বাড়িতে সমীক্ষা চালানো হলো জানাতে হবে সেটাও। আসানসোলের গ্রামীণ এলাকার কর্মরত এক পোস্টম্যান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছে। তবে আমাদের কিছু ইনসেনটিভ দিলে ভালো হয়।’