• প্রদ্যোৎ কিশোরের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি
    আজকাল | ০৩ মার্চ ২০২৪
  • সমীর ধর, আগরতলা: ত্রিপুরা বিধানসভার বাজেট অধিবেশন যখন চলছে তখনই বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল তিপ্রা মথা-র অনশনরত সুপ্রিমো প্রদ্যোৎ কিশোর বিক্রম মানিক্য দেববর্মা এবং অন্য নেতাদের দিল্লিতে ডেকে নিয়ে একটা "ত্রিপাক্ষিক চুক্তি" স্বাক্ষর করল বিজেপি-র ডবল ইঞ্জিন সরকার। সাধারণত, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গেই এ ধরনের চুক্তির কথা এতোদিন শোনা যেত।শনিবার এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় দিল্লির নর্থ ব্লকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা.মানিক সাহা, তাঁর মন্ত্রিসভার দুজন জনজাতীয় সদস্য বিজেপি-র বিকাশ দেববর্মা, আইপিএফটি-র শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও কয়েকজন সরকারি আধিকারিক। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তিপ্রা মথা-র তরফে প্রদ্যোৎ মানিক্য দেববর্মা, বিজয়কুমার রাংখল এবং বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা। ভারত সরকারের তরফে স্বাক্ষর করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উত্তর পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব পীযূষ গোয়েল, ত্রিপুরা সরকারের তরফে চুক্তিপত্রে সই করেছেন মুখ্য সচিব জে কে সিনহা।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মা দুজনেই এই চুক্তিকে "ঐতিহাসিক" বলেছেন। আগরতলা থেকে ৩৫  কিলোমিটার দূরের বড়মুড়া পাহাড়ের হাতাই কতরে বুধবার থেকে পূর্ব ঘোষণা মতো "আমরণ অনশন" শুরু করেন "বুবাগ্রা" (রাজা) প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মা এবং দলের নেতারা। কয়েক হাজার জনজাতি মানুষের উন্মাদনার মধ্যে অনশন শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি ফোন পেয়ে দিল্লি পাড়ি দেন প্রদ্যোৎ। বলে যান, এবার খালি হাতে ফিরব না। তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন- এই খবর পৌঁছতেই হাতাই কতরে হাজার হাজার মানুষ বাঁধভাঙা বিজয়োল্লাসে মেতে উঠেছেন। তাঁর দাবি ছিল, জনজাতিদের সমস্যার সাংবিধানিক সমাধানে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ২০২৩ বিধানসভা ভোটের আগে বাংলাদেশ, আসাম, মায়ানমারের অংশ এবং ত্রিপুরার এডিসি এলাকা নিয়ে পৃথক "গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড" গড়ার দাবি তুলেছিলেন। ভোটের পরে আর সেই দাবি তোলেননি। লিখিত প্রতিশ্রুতি মিলেছে ঠিকই। কিন্তু ঠিক কীসের প্রতিশ্রুতি, এক পৃষ্ঠার ইংরেজি তিন প্যারার সংক্ষিপ্ত  চুক্তিপত্রে কিছুই স্পষ্ট করে বলা নেই। বলা হয়েছে, স্বাক্ষরকারী তিন পক্ষ একমত হয়েছেন যে ত্রিপুরার জনজাতিদের ইতিহাস, জমির অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়ের গ্রহণযোগ্য সমাধান করা হবে। এজন্য একটা যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বা কমিটি তৈরি করা  হবে। কী কী করা হবে, সময় বেঁধে দিয়ে সেসব কীভাবে করা হবে তাঁরাই দেখবেন। এর পরের লাইনটিতে বলা হয়েছে, এই সময়ে আর কোনও আন্দোলন বা প্রতিবাদ ইত্যাদি করা যাবে না। প্রদ্যোৎকিশোর পরে সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে সব হবে। রাতে আগরতলায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এই চুক্তি স্বাক্ষরকে জনজাতিদের উন্নয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন।  বিশ্লেষকরা অনেকে মনে করছেন, কার্যত বড় জয় হল বিজেপি-র। লোকসভা ভোটের আগে ত্রিপুরা যাতে আরেকটা মণিপুর না হয়ে ওঠে, সারা দেশে তার খারাপ প্রভাব না পড়ে, সেটা এড়াতে সফল বিজেপি। আর "আন্দোলন করব না" বলে স্বাক্ষর করে তিপ্রা মথা নিজের পায়ে কুড়ুল মারল কি না বোঝা যাবে ভবিষ্যতে।
  • Link to this news (আজকাল)