Justice Abhijit Ganguly News: মুখে ৩ রাজনৈতিক দলের নাম, কোন পার্টির হয়ে রাজনীতিতে অভিষেক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের?
এই সময় | ০৩ মার্চ ২০২৪
অমিত চক্রবর্তী
মাস তিনেক আগে থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শুরুতে হাইকোর্টের অলিন্দে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল, পদ ছেড়ে রাজনীতিতে যোগদান করছেন তিনি। আর রবিবার সেই সব জল্পনা অবসান। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন পদত্যাগ করছেন তিনি। বিচারপতি পদ থেকে মঙ্গলবার তিনি সরে দাঁড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপতি ও দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথাও জানিয়েছেন।আরও জানিয়েছেন, মানুষের কথা বলতে বৃহত্তর ময়দানে নামতে চান তিনি। বাকি কথা? সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এদিনই বিকালে বার বার তিনি বললেন, ‘সব উত্তর দেব মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায়।’
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তাঁর রাজনীতিতে নামা এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। বরাবর নিজেকে বামপন্থী বলে প্রকাশ করা এই বিচারপতি তাহলে কি সিপিএমের হয়েই লোকসভা ভোটে প্রার্থী হবেন? অনেকেই ভেবেছিলেন, যেভাবে তিনি খোলা এজলাসে বসেই সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রশংসা করতেন তাতে তিনি আগামী দিনে সিপিএমের হয়েই রাজনীতির ময়দানে আসবেন। কেউ কেউ আবার তাঁকে বঞ্চিত মানুষের জন্য লড়াইয়ের মসিহা বলেও তুলনা করছিলেন।
কিন্তু, যাদবপুর থেকে তাঁকে যদি টিকিট দেওয়া হয়, তাহলেও কি তিনি শুধু নিজের ক্যারিশমায় সিপিএমের জয় আনতে পারবেন! এই নিয়েই এখন কিন্তু জোর চর্চা চলছে নীচুতলার বামপন্থীদের চায়ের ঠেকে।
গত ২৫ জানুয়ারি তাঁর এজলাসে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত- র সঙ্গে তুমুল তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রকাশ্যেই বলেন, ‘আপনি বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটে লড়ছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে।’ আরও অন্যান্য বিতর্কিত মন্তব্য করে দুপক্ষই। সেখানে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেদিন প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘কেউ কখনও তাঁকে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য যোগাযোগ করেনি।’ আর নিজেকে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন বলে প্রকাশ করা তথা বিচারপতির মতো একটি পদ ছেড়ে পদ্মে ফুঁটবেন এটা হয়তো তাঁর বহু শুভাকাঙ্ক্ষীও বিশ্বাস করেন না। তবে একটি সূত্রে দাবি, বিজেপিতে যাচ্ছেন তিনি।
এদিন তিনি বিচারপতি পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছেন, রাজ্যের শাসকদলই তাঁকে যে খোলা ময়দানে নেমে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ করেছে। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি যে আগামীদিনে তৃণমূলের হয়ে ভোট লড়ছেন না সেটা স্পষ্ট। আবার এ বছর ১০ আগস্ট তাঁর এমনিতেই অবসরের কথা। তারপর তিনি কি করবেন সে নিয়েও জল্পনা ছিল।
তবে এখন পদত্যাগ করে সিপিএমের টিকিটে দাঁড়িয়ে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করাটা আদৌ ঠিক হবে কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী আগ বাড়িয়ে তাঁর হয়ে কিছু গাল ভরা কথা বললেও, এ রাজ্যে তাঁদের অস্তিত্ব যে বিপন্ন তা জানে প্রায় সকলেই। তাই অনেকেই বলছেন, ক্ষমতায় থাকতে গেলে ওই দলের হয়ে ভোটে লড়ে হেরে গিয়ে গায়ে কালি লাগানো ছাড়া উপায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে দেশের শাসকদল এবং এ রাজ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও নিশ্চিন্ত আসন দেওয়া হলে তা সবদিক থেকেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করছেন বহু আইনজীবী, রাজনীতির কারবারিরাও।
এদিন এবিপি আনন্দের সাক্ষাৎকারে তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘এখানে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে। বামদল রয়েছে , কংগ্রেস রয়েছে, বিজেপি রয়েছে, ছোট ছোট অন্য অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। তারা যদি মনে করেন আমাকে টিকিট দেবেন তখন আমি ভেবে দেখব সেই প্রার্থীপদ আমি নেব কি নেব না। আজই এই নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলব না।’
এই বাজারে টিকিট পেতে অনেকেই ফেব্রুয়ারির শুরুতে নাগপুর ছুটেছেন। একদা এই রাজ্যে প্রভাবশালী পদে কাজ করে যাওয়াদের ধরেও কেউ কেউ দিল্লির জয় সিং রোডের 'যন্তর মন্তরের' কাছের বাংলোতেও পৌঁছেছেন সব ফাইনাল করতে। অনেকেই বলছেন, মাননীয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ‘সাত-পাঁচ’ ভেবেই নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন।
উল্লেখ্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি হবে আগামী শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে।