Adenoviruses: স্টম্যাক ফ্লুয়ে কাবু আট থেকে আশি, নেপথ্যে সেই অ্যাডিনো!
এই সময় | ০৪ মার্চ ২০২৪
এই সময়: জ্বর হয়তো তেমন নেই। কিন্তু হাওয়া বদলের এই মরশুমে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গেই বাড়ছে পেটের সমস্যা। ভাইরাল সংক্রমণে পেট খারাপে কাহিল হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। যাকে চলতি ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হচ্ছে, স্টম্যাক ফ্লু।
পেট ব্যথা, ডায়েরিয়া আর বমির সেই উপসর্গ অনেক সময়েই বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করছে ছোটদের ক্ষেত্রে। বিশেষত তিন বছরের কম বয়সিদের মধ্যে। তখন হাসপাতালেও ভর্তি করতে হচ্ছে তাদের। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আউটডোর ক্লিনিকে প্রতি তিন জন আসা শিশুরোগীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রেই এখন দেখা যাচ্ছে এই মরশুমি অসুখ।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নামে স্টম্যাক ফ্লু হলেও, এই সংক্রমণের নেপথ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস নেই। বরং রয়েছে রোটা ভাইরাস, নোরো ভাইরাস ও অ্যাডিনো ভাইরাসের ভূমিকা। শ্বাসনালীর পরিবর্তে এই জীবাণুগুলি হামলা চালাচ্ছে খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রে, আরও ভালো করে বললে, পাকস্থলি ও ক্ষুদ্রান্ত্রে।
আর তার ফলেই পেট মোচড় দিচ্ছে, সঙ্গে পাতলা পায়খানা, বমি কিংবা গা-গুলানো ভাব। বয়স্ক ও একরত্তিদের ইমিউনিটি কম বলে তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই সংক্রমণটা অন্যদের মতো দিন তিনেকের মধ্যে নিজে থেকেই কমে না গিয়ে উল্টে বেয়াড়া আকার ধারণ করছে। ভয়াবহ জলশূন্যতার সমস্যা নিয়ে তাদের একাংশকে তখন ভর্তি করতেই হচ্ছে হাসপাতালে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রোহিত কাপুর বলেন, ‘যারা চট করে সেরে উঠছে না, তাদের মল পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, ভিলেন মূলত রোটা অথবা অ্যাডিনো ভাইরাস।’
রোহিত জানান, রোজ যত রোগী তিনি দেখছেন, তার অন্তত ৩০% শিশু এই স্টম্যাক ফ্লু বা ভাইরাল গ্যাস্ট্রো-এন্টেরাইটিসের শিকার। এদের মধ্যে আবার ২৫-৩০% বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। আর এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা জানাচ্ছেন, তাঁরও একই রকম অভিজ্ঞতা। মূলত জলশূন্যতা আর সংক্রমণ বাগে না আসার সমস্যা নিয়েই কিছু শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজি বিশেষজ্ঞ প্রদীপকুমার শেঠি বলেন, ‘প্রতি বছরই এই গরম পড়ার সময়ে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। খুব নতুন কিছু নয় সেটা। সব বয়সেই হয়। কিন্তু ব়ডদের চেয়ে ছোটদের হাসপাতালে ভর্তির নজির অনেকটাই বেশি।’
ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জয়দীপ ঘোষ জানাচ্ছেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে এখনও অবশ্য ভাইরাল সংক্রমণের জেরে শ্বাসনালীর সংক্রমণই বেশি হচ্ছে খাদ্যনালীর সংক্রমণের তুলনায়। কিন্তু পেটের সংক্রমণও হচ্ছে প্রচুর। এবং এর জেরে বহু কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। কেননা, বহু রোগীর একই সঙ্গে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর সংক্রমণ হচ্ছে। ফলে পেট খারাপ, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, বমির সঙ্গেই থাকছে সর্দি-কাশি-জ্বর। নেপথ্যে থাকছে মূলত রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)। এবং আক্রান্ত হচ্ছেন মূলত মাঝবয়সিরাই, যাঁরা বাইরে বেরোন সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা তাই খাবার ও পানীয়ের ব্যাপারে এই মরশুমে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘শীতে খাবার বা পানীয় মারফৎ সংক্রমণের আশঙ্কা তেমন থাকে না। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আশঙ্কা বাড়ে। বাড়ির বাইরের পানীয় জল কিংবা কাটা ফল/স্যালাড অথবা অনেক আগে রান্না হওয়া খাবারের মাধ্যমে সহজেই জীবাণু হামলা চালায় শরীরে।’তাঁর পরামর্শ, এমন সংক্রমণ হলে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া বা ফ্লুইড ইনটেকে জোর দিতে হবে। যাতে শরীর থেকে ভাইরাসের নিষ্ক্রমণের হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি, ঠেকানো যায় জলশূন্যতাও। ওআরএস খেলে আরও ভালো। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘এই সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। লাভও হয় না তাতে।’