বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এফডি-র টাকা যাদবপুরের এক অ্যাকাউন্টে
এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৪
এই সময়, বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিক্সড ডিপোজ়িট কাণ্ডে ধৃত শেখ এনামুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, এফডি-র প্রায় ২ কোটি টাকা ধাপে ধাপে পাঠানো হয়েছে যাদবপুরে সুব্রত দাস নামে এক ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এই চক্রে অন্যতম অভিযুক্ত এবং এখনও পর্যন্ত অধরা ভক্ত মণ্ডল বর্ধমান শহরের আশপাশ এলাকাতেই রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই বর্ধমান জেলা বিচারকের এজলাসে জামিনের আবেদন জানাতে পারেন তাঁর আইনজীবী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এনামুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন, ভক্ত মণ্ডলের নির্দেশেই এফডি ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায় যেতেন। এনামুলের দাবি, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজ়িট ভাঙানোর পর আগামীতে এই কাজ করতে রাজি না-হলে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ভক্ত মণ্ডল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের এক আধিকারিক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানে স্টেশন বাজার জেলখানা মোড়ের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় থাকা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এফডি-র টাকা যাদবপুরে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় জনৈক সুব্রত দাস নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে মোট তিন ধাপে পাঠানো হয়। ২০২২ সালের ১২ ও ২৬ অগস্ট এবং ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ— এই তিন তারিখে সুব্রত দাসের অ্যাকাউন্টে পাঠানো টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা।
বিষয়টি ভক্ত মণ্ডল ও শেখ এনামুল হক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের এক আধিকারিকও জানতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ডেন জুবিলি বিল্ডিংয়ের ফিনান্স অফিসেও রীতিমতো আসা-যাওয়া ছিল সুব্রত দাসের। বর্ধমান ইউনিভার্সিটি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা চাই পুলিশ এর গভীরে গিয়ে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করুক, সে আধিকারিক হোক বা কর্মচারীই হোক। আমাদের কাছে আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ, পরে সহকর্মী।’
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে অনেক রাঘব বোয়াল জালে উঠবে।’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘এনামুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য উঠে আসছে তা ক্রস ভেরিফাই করে আমরা এগোচ্ছি, যাতে কোনওরকমেই আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে যেতে না পারে। এই কাণ্ডে যাঁরা জড়িত তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
এদিকে, সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই আর্থিক কেলেঙ্কারির অন্যতম অভিযুক্ত ভক্ত মণ্ডল তাঁর আইনজীবী মারফত এনামুল শেখের গ্রেপ্তারের পরেই বর্ধমান আদালতে জামিনের জন্য আপিল করবেন বলে সব ঠিক করে রেখেছিলেন। সেদিন তিনি তাঁর আইনজীবীর বলে দেওয়া আদালত চত্বরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আত্মগোপনও করেছিলেন।
কিন্তু সেদিন বর্ধমান সিজেএম আদালত এনামুলের জামিনের আবেদন খারিজ করার পাশাপাশি পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর আর জামিনের আবেদন জানাননি। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই বর্ধমান জেলা বিচারকের এজালাসে জামিনের আবেদন জানাতে পারেন ভক্ত মণ্ডলের আইনজীবী।
অন্যদিকে, এফডি কাণ্ডের তদন্তে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হওয়া ৯ সদস্যের কমিটির মধ্যে নতুন করে আরও এক সদস্যকে যোগ করা হলো। এ নিয়ে কমিটির সংখ্যা দাঁড়াল ১০। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র এক নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট অফিসার ইন্দ্রজিৎ রায়কে এই কমিটিতে যুক্ত করা হলো। সূত্রের খবর, তৈরি হওয়া এই ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার প্রথম বৈঠকে বসতে চলেছে।