আশাকর্মী: কর্মবিরতির প্রভাব কি পোলিয়োতেও, অসুস্থ শিশু
এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৪
অনির্বাণ ঘোষ
চার দিনে পড়ল ‘কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ বঞ্চনা’র অভিযোগে শুরু হওয়া আশা কর্মীদের কর্মবিরতি। রাজ্যের প্রায় ৭০ হাজার আশা কর্মীর মধ্যে ৫০ হাজারই গত ১ মার্চ থেকে এই কর্মবিরতিতে সামিল। ফলে স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার না করলেও প্রাথমিক স্তরে একেবারে বুনিয়াদি স্বাস্থ্য পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার জোগাড়। যার মধ্যে অন্যতম টিকাকরণ-সহ প্রসূতি ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা।এমনই সন্ধিক্ষণে রবিবার ছিল পালস পোলিয়ো টিকাকরণ। বিকল্প কর্মী দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে বড়সড় বিপত্তি ঘটলো জলপাইগুড়িতে। এক শিশুকে দু’ ফোঁটার বদলে এক ফাইল পোলিয়ো খাইয়ে দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
স্বাস্থ্যকর্তাদেরই একাংশ মানছেন, যত দিন না মেটে কর্মবিরতি, তত দিন শুধু পালস পোলিয়োই নয়, শিশু ও গর্ভবতী মায়ের টিকাকরণ, আসন্নপ্রসবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানো, প্রেসার-সুগার রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো, ঝুঁকিসম্পন্ন মায়েদের চেক-আপ, জন্ম ও মৃত্যুর নথিভুক্তিকরণ, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড খাওয়ানো, গর্ভাবস্থাকালীন চেক-আপ, প্রসবের পর ৩ দিন, ৭ দিন, ১৪ দিন, ২১দিন, ২৮ দিন ও ৪২ দিনের মাথায় হোম-ভিজিট ইত্যাদির মতো গুচ্ছ পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যদিও স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা জানাচ্ছেন, আশা কর্মীদের কর্মবিরতিতে তেমন মারাত্মক প্রভাব এখনও পড়েনি। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘মোট ৮৪ লক্ষ পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর দু’ ফোঁটা করে পোলিয়ো টিকা খাওয়ার কথা বাংলায়। রবিবার ন্যাশনাল ইম্যুনাইজেশন ডে উপলক্ষ্যে তিন দিনের যে পালস পোলিয়ো টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছে, তার প্রথম দিনেই এর ৭৮ শতাংশ কভারেজ হয়েছে। প্রতি বছর এমন কভারেজই হয়।’
তাঁর দাবি, কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন মাত্র ৩৮ শতাংশ আশা কর্মী। বাকিরা কাজ করছেন। অনেকে হয়তো সংগঠনের কোপে পড়ার ভয়ে নীল শাড়ির ইউনিফর্ম ছাড়াই কাজ করছেন। কিন্তু এই ৩৮ শতাংশ আশা কর্মীর যে ঘাটতি, ন্যাশনাল ইম্যুনাইজেশনের মতো কর্মসূচিতে তা পূরণ করছেন কারা? স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের দাবি, কিছুটা ঘাটতি পূরণ করছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।
আর বাকিটা সামাল দেওয়া হচ্ছে ২০০৫ সালের আগে (যখন আশা কর্মীরা ছিলেন না) যে ভাবে হতো, সেই অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের মাধ্যমে। যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের অন্য একটি অংশের দাবি, এই সব স্বেচ্ছাসেবকদের প্রথাগত প্রশিক্ষণ না থাকায় বাস্তবে কার্যত নাজেহাল হতে হচ্ছে পালস পোলিয়োর মতো দেশের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচিতে। এর জেরেই হয়তো অঘটন ঘটে গিয়েছে জলপাইগুড়িতে।
মাল মহকুমার ক্রান্তি ব্লকে মায়ের সঙ্গে একটি বছর চারেকের শিশু পোলিয়ো খেতে এসেছিল। তখনই তাকে দু’ ফোঁটার বদলে এক ফাইল পোলিয়ো খাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শিশুর মা-বাবার দাবি, এতেই শিশুটির ধুম জ্বর এসে যায়। তাকে মালবাজার সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে না পড়লেও আপাতত তাকে দিন দুয়েকের জন্য নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
যদিও ওই শিশুর ক্ষুব্ধ বাবা তপন রায় ক্রান্তি ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর পরেই জলপাইগুড়ির জেলাশাসক সামা পারভিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেন।