Kalyan Banerjee: জাস্টিস গাঙ্গুলির সব রায় খারিজ চান কল্যাণ
এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৪
এই সময়: গত আড়াই বছরে রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আবার এজলাসে বসেই রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা হয়েছে। কিন্তু সেই তিনি, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রবিবার খোলাখুলি রাজনীতির ময়দানে নামার কথা বলায় তাঁর দেওয়া আগের রায়গুলির কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া সেই সব মামলার রায় খারিজের দাবি জানিয়ে সোমবার হাইকোর্টে সরব হলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গঠিত হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন শুনানি চলছিল। তারই মধ্যে বিতর্কিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘আমি অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এসেছি। এই সব মামলা খারিজ করা হোক। সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক ভাবে এই সব অর্ডার দিয়েছেন। কিছু আইনজীবী তাঁকে মদত দিয়েছেন। তার সব অর্ডার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
কল্যাণের আরও অভিযোগ, ‘তিনি পলিটিক্যাল ম্যান। এমন মামলার তিনি রায় দিলেন যাতে তিনি পলিটিক্যাল কেরিয়ার গড়ে ফেললেন।’ কটাক্ষের সুরে তাঁর সংযোজন, ‘এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আরও দু’জন জজ আছেন, তাঁরাও যাবেন। সিট খুঁজছেন।’ এজলাসে তখন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করছিলেন। তাঁকে উদ্দেশ করেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন কল্যাণ। যদিও বিচারপতি বসাকের বেঞ্চ কল্যাণের সওয়ালের প্রেক্ষিতে এদিন কোনও নির্দেশ দেয়নি। বেঞ্চ শুধু কল্যাণকে জানায়, এই মামলায় তাঁর বলার সময় এলে তিনি বলতে পারেন।
মেয়াদ শেষের মাস পাঁচেক আগে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছেন শিবসেনাও (উদ্ধব)। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউতের তোপ, ‘যদি হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতি পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, তার মানে তিনি ন্যায় বিচার করেননি, একটি পার্টির হয়ে কাজ করছিলেন।’
ঘটনাচক্রে কিছুদিন আগে নিয়োগ মামলাতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের নজিরবিহীন টানাপড়েন মেটাতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলা পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে বিচারাধীন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পদত্যাগ করলে ওই মামলাতেও শীর্ষ আদালত কী পদক্ষেপ করে, সেটাও দেখার।
প্রবীণ আইনজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, বিচারপতি পদ ছেড়ে রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম নন। ১৯৬৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কোকা সুব্বা রাও অবসরের তিন মাস আগে পদত্যাগ করেন। তিনি অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেসের জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। আবার বিচারপতি তথা রাজনীতিক বহারুল ইসলাম কংগ্রেসের হয়ে ১৯৬২ ও ১৯৬৮ সালে রাজ্যসভায় অসম থেকে নির্বাচিত হন। আবার ১৯৭২ সালে রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করে গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি হন।
১৯৮০ সালে অবসরের পর ফের ফিরে যান রাজনীতিতে। ন’মাস পরে ইন্দিরা গান্ধী সরকার তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদে বসায়। আবার কেএস হেডড়ে কংগ্রেসের হয়ে দু’বার রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলেও ১৯৫৭ সালে তিনি মাইসোর হাইকোর্টের বিচারপতি হয়ে ১০ বছর চাকরি করেন। অবসরের পরে তিনি জনতা পার্টির টিকিটে ভোটে জিতে লোকসভার স্পিকার হন ১৯৭৭ সালে। একসময়ে সিপিআইয়ের সদস্য থেকে পরে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া আফতাব আলম পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের বিচারপতি হন।
আবার এফআই রেবেলো বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে বসার আগে গোয়ায় জনতা পার্টির বিধায়ক ছিলেন। বর্ষীয়ান আইনজীবীরা বলছেন, দেশে রাজনীতিক থেকে বিচারপতি হওয়া বা উল্টো উদাহরণ বহু। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন সম্ভবত কর্মরত অবস্থায় টিভি সাক্ষাৎকার দিয়ে তাঁর এজলাসে বিচারাধীন মামলা নিয়ে কথা বলায়। ফলে তাঁর দেওয়া রায় আগামী দিনে শুধু এই যুক্তিতেই চ্যালেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, ‘উনি কলকাতা হাইকোর্টের গরিমা নষ্ট করার জন্য যা যা করতে হয় সবটাই করেছেন। তবে একজন আইনজীবী হিসেবে আমি খুশি, যে এমন বিচারপতির সামনে আর আইনজীবীদের হাজির হতে হবে না।’ বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ অবশ্য মনে করেন, এটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তাই এনিয়ে তিনি মন্তব্যে নারাজ।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এদিন পদত্যাগ না করলেও কলকাতা হাইকোর্টের তরফে আজ, মঙ্গলবারের মামলার তালিকায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম নেই। তার এজলাসে থাকা শ্রম সংক্রান্ত মামলাগুলি বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে পাঠানো হয়েছে।