• Trinamool Congress : তাপসের দলত্যাগের দিনই সুদীপের বাড়িতে সান্ধ্য চা-চক্রে হাজির কুণাল
    এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: বরফ কি তবে গলল? যে দিন তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায় দলত্যাগ করলেন। ঠিক সেই দিনই দলের তরফে শোকজের চিঠি পাওয়ার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ পেলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। সুদীপের বাড়িতে কুণালের এই ‘চায়ে পে চর্চা’ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চার শেষ নেই।সোমবার দুপুরে তাপস রায়ের বাড়ি থেকে ফিরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কুণাল। তিনিই জানান, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোন করে সন্ধ্যায় চায়ের নিমন্ত্রণ করেছেন। এমনকী ফোনে জানিয়েছেন উত্তর কলকাতায় দলীয় মিটিংয়ে না ডাকার বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল বলেও স্বীকার করেছেন। কুণাল বলেন, ‘ওঁর অফিসের ডেসপ্যাচ থেকে চিঠি যেতে সমস্যা হয়েছিল। উনি এটাও বলেছেন, হোয়াটসঅ্যাপে চিঠির কপি পাঠানো উচিত ছিল।’

    এরপর সন্ধ্যায় চা চক্র সেরে এসে কুণাল ফের বলেন, ‘সুদীপদা আমাদের তৃণমূল পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। যতক্ষণ না দল প্রার্থী হিসেবে অন্য কারওর নাম ঘোষণা করছে ততক্ষণ পর্যন্ত স্ট্যান্ডিং এমপি হিসেবে তিনিই আমাদের প্রার্থী। যেখানে যেখানে সমস্যা আছে বা ছিল সেই সব নিয়েই কথা হয়েছে। আমি এর চাইতে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না।’ এদিন সুদীপের বাড়িতে চা ছাড়াও ছিল ফিশ ফ্রাই, সন্দেশ। আর যেহেতু তিনি নাড়ু খেতে ভালোবাসেন তাই আলাদা প্লেটে নাড়ুর ব্যবস্থা করেন সুদীপ জায়া নয়না। পরে কুণাল ঘোষণা করেন, বুধবার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এবং সুদীপ উপস্থিত থাকবেন।

    কিছুদিন আগেই কুণাল কার্যত ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন সুদীপের বিরুদ্ধে। তাঁকে বিজেপি বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি ইডি ও সিবিআই ডিরেক্টরকে এক্স হ্যান্ডেলে ট্যাগ করে সুদীপের জেলযাত্রার সময়ে বেসরকারি হাসপাতালে থাকার খরচ কে জোগালো, তা নিয়েও তদন্তের দাবি করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, সুদীপ উত্তর কলকাতার সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে এবং তাঁর মতো অনেক কর্মীকে মিটিংয়ে ডাকেন না। সরাসরি সুদীপকে রোজভ্যালির দালাল বলেও কটাক্ষ করেন কুণাল। শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুকে সামনে রেখে দলের মুখপাত্র ও অন্যান্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।

    এর আগে দ্রোহকালের সময়ে কুণাল দাবি করেছিলেন, সুদীপকে উত্তর কলকাতার প্রার্থী না করে শশী পাঁজার মতো কাউকে প্রার্থী করা উচিত। সেই প্রসঙ্গেও কুণালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এদিন বলেন, ‘যেহেতু সুদীপদা আমাকে ডেকেছেন, ফোন করেছেন, সেজন্য এখন আর আমার এ ধরনের কথা বলা অসৌজন্য হবে।’

    আর সুদীপের সঙ্গে মিটিংয়ের পরে আবার সেই প্রসঙ্গে কুণালকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো আজকে আলোচনা করলাম। আমার তো মনে হয়, নয়নাদির নাম প্রার্থী হিসেবে আসা উচিত। কারণ, মমতাদি ১৯৯৮ সালে শ্যামবাজার থেকে যে প্রথম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিলেন তাতে প্রথম দশ জনের একজন ছিলেন নয়নাদি। এই সব স্মৃতিচারণ হলো।’ কিন্তু ইতিমধ্যেই কুণাল বলে ফেলেছেন, সুদীপের মাথার উপর মোদীর হাত রয়েছে। তিনি ঈসলে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে চা চক্রের পরে সেই কুণালের অনুধাবন, ‘এখনও চায়ের স্বাদ মুখে লেগে আছে। নিশ্চিত ভাবেই আমি বলেছিলাম কিছু কথা। তার চুল চেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। কিছু সমস্যা ছিল, সেই সব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আর এই বিষয়ে কিছু বলার নেই।’

    সোমবার সন্ধ্যা ঘনাতেই সুদীপের বাড়ির উপর তাক করা ছিল সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা। সুদীপ বাড়িতে ঢোকার সময়ে এ ব্যাপারে বলেন, ‘একই রাজনৈতিক দল করি, এক সঙ্গে চা খেতে অসুবিধে কোথায়? আমার তো কোনও সমস্যা নেই।’ এ দিকে তাঁর বিরুদ্ধেই কার্যত তোপ দেগে দলত্যাগ করেছেন তাপস রায়। সে প্রসঙ্গে সুদীপের বক্তব্য, ‘গত তিন চার দিন ধরে যা বলছি, এবারও তাই বলব, নো কমেন্টস।’

    কুণাল অবশ্য বলেন, ‘নিশ্চিত ভাবেই সুদীপদার সঙ্গে তাপসদার বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমিও চাইনি তাপস দল ছেড়ে চলে যাক। সুদীপদা চাননা তাপসদা অন্য কোনও দলে যান। এই টুকু ছাড়া আর বিশেষ কিছু আমি বলব না।’ সুদীপের স্ত্রী এবং চৌরঙ্গির বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার দাবি, ‘তৃণমূল একটা পরিবার। এই পরিবারে চেঁচামেচি হবে, কেউ কেউ কটু কথা বলবে। কিন্তু পরিবার ভাঙবে না।’ সেই ‘পরিবার’-এর সঙ্গে দেখা করতেই এ দিন সন্ধ্যায় নির্ধারিত সময়ে সুদীপের মৌলালি এলাকার বাড়িতে পৌঁছন কুণাল। ঢোকার মুখে তিনি বলেন, ‘আমি তো চা খেতে এসেছি।’ আর চা খেয়ে এসে খানিকটা যেন তৃপ্তির সুরই শোনা গেল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের গলায়।
  • Link to this news (এই সময়)