মস্কো: আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে এ বার হাতিয়ার ডিপ ফেকও! বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের প্রমিসিং নেত্রীদের ডিপ ফেক পর্ন তৈরি করে তাকেই অস্ত্র বানিয়ে এঁদের সুনাম খর্ব ও সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটানোর পরিকল্পনা করেছেন। এআই-এর মাধ্যমে ইউক্রেনের মহিলা রাজনীতিকদের পর্ন তৈরি করে অতীতে ক্রেমলিন বেশ 'সফল' হয়েছে। এ বার অন্যান্য পশ্চিমি দেশকে দুর্বল করতেও তারা এই 'সিক' (ঘৃণ্য) পদ্ধতি নিতে চলেছে বলে এক প্রাক্তন ইউএস অফিশিয়াল একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ডিসইনফর্মেশন টাস্ক ফোর্সের প্রাক্তন এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর নিনা জাঙ্কোউইজ় নামে ওই এক্স-অফিশিয়ালের বক্তব্য, 'আমি যদি রাশিয়া হতাম, তা হলে গণতন্ত্রকে ছোট করে দেখানোর জন্য ডিপ ফেক ব্যবহার করতাম...ক্ষমতার ভারসাম্যকে ঘেঁটে দেওয়ার জন্য তাকে ব্যবহার করতাম। এবং এ ক্ষেত্রে মহিলাদের টার্গেট করাই সবচেয়ে সহজ।'
মূলত ইউক্রেন ও জর্জিয়া-সহ বিভিন্ন পশ্চিমি দেশে কী ভাবে এমন 'সেক্সুয়ালাইজ়ড প্লেবুক'কে রাশিয়া অতীতে হাতিয়ার করেছে, তার নির্দিষ্ট উদাহরণও দিয়েছেন ওই ইন্টেলিজেন্স এক্সপার্ট। তিনি জানান, বছর সাতেক আগে তখনকার টুইটারে (এখন 'এক্স') প্রাক্তন ইউক্রেনীয় এমপি স্ভিৎলানা জ়ালিশচুকের একটি ফেক পোস্ট দিয়ে জানানো হয়েছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে ইউক্রেন হারলে তিনি নাকি রাস্তা দিয়ে নগ্ন হয়ে দৌড়বেন।
এর বেশ ক'মাস বাদে মহিলা ইস্যু সংক্রান্ত ইউনাইটেড নেশনসের একটি মিটিংয়ে এক জার্মান রিপোর্টার জ়ালিশচুককে জিজ্ঞাসা করেন, টুইটারের ওই 'প্রতিজ্ঞা' তিনি রাখবেন কি না। সেই ঘটনার বছর দুয়েক পরে, ২০১৯ সালে নির্বাচনে হেরে যান ওই মহিলা এমপি। এ ভাবে ডিপ ফেকের মাধ্যমে মহিলাদের মুখ বন্ধ রাখার ভালোমতো 'ট্র্যাক রেকর্ড' রয়েছে ক্রেমলিনের।
জাঙ্কোউইজ়ের কথায়, 'এ সব পদ্ধতিকে খুব স্ট্র্যাটেজিক ভাবে ব্যবহার করে রাশিয়া। সমাজের একেবারে মূলে আঘাত করে তার ফ্যাব্রিকটাই নষ্ট করে দেয় ওরা। পুরুষতন্ত্রকে উস্কানি দিয়ে সমাজের ভারসাম্য ঘেঁটে দেওয়া ক্রেমলিনের পুরোনো পদ্ধতি। কারণ, এ ভাবে একজন মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতায় চিড় ধরানো যায়।'
জাঙ্কোউইজ় নিজেও এআই পর্নের শিকার। জর্জিয়াতেও কিছু দুষ্কৃতী দল ক্রেমলিনের সঙ্গে আঁতাঁতে মহিলা রাজনীতিকদের ফেক সেক্স টেপ ছড়িয়েছিল। যার জেরে বিভিন্ন সময়ে অনেক মহিলা পাবলিক লাইফ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজেদের সরিয়ে নেন বলে জাঙ্কোউইজ়ের দাবি।
সামনেই ইউকে, ইউএসএ-সহ বেশ কিছু দেশে নির্বাচন। তার আগে হাই-র্যাঙ্কিং মহিলা অফিশিয়াল ও রাজনীতিকদের দুর্বল করতে তাঁদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পথ ক্রেমলিন ধরতেই পারে বলে সতর্ক করছেন জাঙ্কোউইজ়।