Vote For Note Cash : ‘ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন’ বিতর্কে প্রভাব পড়বে কি সুপ্রিম রায়ের?
এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৪
এই সময়, নয়াদিল্লি: সংসদ বা বিধানসভা, দেশের আইনসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলে আইন মাফিক পদক্ষেপ করা যাবে, কোনও রক্ষাকবচ থাকবে না তাঁদের জন্য—সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ের কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে জল্পনা রাজনৈতিক ও আইনি মহলে। কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে কোনও নির্দিষ্ট দলের হয়ে আইনসভার সদস্যদের ভোটদানের অভিযোগ উঠেছে।ক’দিন আগে হিমাচলপ্রদেশেই রাজ্যসভার ভোটে ব্যাপক ক্রসভোটিং হয়েছে বলে দাবি কংগ্রেসের। আবার গত ডিসেম্বর মাসে ‘ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন’ বিতর্কে খারিজ হয়েছে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ। তাহলে কি এই সব ঘটনার ক্ষেত্রেও শীর্ষ আদালতের রায়ের প্রভাব পড়বে? যে প্রক্রিয়ায় তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মহুয়া। তাঁর আর্জি শীর্ষ আদালতেই বিচারাধীন। পাশাপাশি এথিক্স কমিটি এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সুপারিশ করেছে। সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে লোকপাল। তার ভিত্তিতে সিবিআই প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে এথিক্স কমিটির কাছে রিপোর্ট তলব করেছে।
শীর্ষ আদালতের এদিনের রায়ের পরে মহুয়ার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা আইনজ্ঞরা খতিয়ে দেখছেন। ঘটনাচক্রে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (ফেমা) লঙ্ঘনের মামলায় মহুয়াকে হাজিরার জন্য এদিনই নোটিস পাঠিয়েছে ইডি। আবার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ও আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহুয়া। তাঁর আর্জি ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় দুবে ও দেহদ্রাই এমন কিছু পোস্ট করছেন, যা তৃণমূল ও তাঁর নিজের জন্য মানহানিকর। এমন কোনও পোস্ট যাতে তাঁরা আর না করেন, সেই নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন মহুয়া। এদিন আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
আইনজ্ঞদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশের পরে হিমাচল প্রদেশে সদ্যসমাপ্ত রাজ্যসভা ভোটে ক্রসভোটিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত ৬ জন কংগ্রেস সাংসদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা সম্ভব৷ প্রবীণ আইনজীবী, কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই ইস্যুটি ঝুলে ছিল৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই৷ জনপ্রতিনিধি আইন প্রণেতাদের রক্ষাকবচ দেওয়া হয় তাঁদের দায়িত্বপালন করার জন্য, ঘুষ নেওয়ার মতো অতিরিক্ত সুবিধে পাওয়ার জন্য নয়৷ আরও আগে এই রায়দান করা হলে ভালো হতো৷’
বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ, আইনজীবী সুখেন্দুশেখর রায়৷ তাঁর কথায়, ‘জনপ্রতিনিধিদের জন্য আলাদা রক্ষাকবচ থাকবে কেন? স্বাধীন দেশের নাগরিকদের মধ্যে এই ভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায় না৷ সেখানে ভোটার, ভোটপ্রার্থী হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস সম্ভব নয়৷ আইন ভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাস একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়৷’
যদিও সুখেন্দুশেখরের প্রশ্ন, ‘দুর্নীতি ভারতে সর্বগ্রাসী, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ দুর্নীতি প্রবেশ করেছে৷ এদেশের বড় বড় শিল্পপতিরা কম দুর্নীতিগ্রস্ত নন৷ শিল্পপতিদের মধ্যে যাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন, দেশের বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হচ্ছে না? কেন পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্সে উল্লিখিত দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না?’ তাঁর যুক্তি, ‘সবাইকে ছেড়ে শুধু জনপ্রতিনিধিদের নিশানা করার প্রবণতা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়৷’