• ১৪টি মামলায় CBI থেকে পার্থ-মানিক, চাকরিপ্রার্থীদের 'ভগবান', একনজরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস
    আজ তক | ০৫ মার্চ ২০২৪
  • রাজ্য রাজনীতি এখন তোলপাড় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে যাচ্ছেন জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে । রবিবার দুপুর থেকে এই একটি খবরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এতদিন বিচারপতি হিসেবে সত্যের পক্ষে অবিচল ছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার রায়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন বহু  চাকরিপ্রার্থীরা। গত দুবছরে একাধিক দুর্নীতির মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বিচারপতি। সমাজের একাংশের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভগবান।

    তার পদত্যাগের আগেই মিডিয়ার সঙ্গে  কথা বলতে গিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "গত কয়েক বছর ধরে, আমি এমন কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছিলাম যেখানে বিশাল দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া গেছে। আমি মনে করি একজন বিচারক হিসাবে আমার দায়িত্ব এখন শেষ। আমার বিবেকের আহ্বান যে এখন আমার জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। আমাদের দেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর লোক আছে যারা আদালতে আসতে পারে না। তাদের সাহায্য করার জন্য শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরা কিছু করতে পারেন। আমি তাদের জন্য কাজ করতে চাই। সেই মানুষগুলোর জন্য  এখন কাজ করব।" 

    বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৬২ সালের ২০ অগাস্ট কলকাতায় এক আইনজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার একটি বাংলা মাধ্যম স্কুল মিত্র ইনস্টিটিউশনে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ সালে তাঁর স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর তিনি কলকাতার হাজরা ল কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, যেখানে বাংলা থিয়েটারের প্রতি তার অনুরাগ তৈরি হয়, ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত থিয়েটার গ্রুপ "অমিত্র চন্দ" এর সঙ্গে  প্রযোজনাগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস অফিসার হিসাবে তার পেশাগত যাত্রা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শীঘ্রই কলকাতায় ফিরে আসেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে আইন অনুশীলন শুরু করেন। তিনি ২ মে,২০১৮-এ হাইকোর্ট দ্বারা অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীকালে ৩০ জুলাই, ২০২০-এ স্থায়ী বিচারক হিসাবে দায়িত্ব নেন।

    অন্যায়ের সঙ্গে  কোনদিন আপস করতে শেখেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ভালোবাসেন বই পড়তে, সিনেমা দেখতে এবং নতুন নতুন বিখ্যাত মানুষদের জীবনী জানতে। আইনের পাশাপাশি ইংরেজি এবং বাংলা সাহিত্য পড়তে পছন্দ করেন বিচারপতি। তার পছন্দের কবি জীবনানন্দ দাশ এবং জয় গোস্বামী। বিচারপতি হিসেবে একাধিক উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে একাধিক নির্দেশ দেন। গঙ্গোপাধ্যায়ই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে সিবিআই হাজিরার নির্দেশ দেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পেছনে বিচারপতির পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের  ভগবান হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

    নিজের বিচারক জীবনে কখনও পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে বলা। কখনও মানিক ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া। কখনও তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়েকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে সেই চাকরি যোগ্য় প্রার্থীকে দেওয়া। বিচারপতি হিসেবে একের পর এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় ।

    বহু গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
    কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি হিসেবে প্রায় ১৪টি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। ২০২১-এর জুন থেকে ২০২৪-এর ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত একটানা নিয়োগ দুর্নীতির মামলা শুনেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। আর তার মধ্য়েই একের পর এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন তিনি। তার সাহসী পদক্ষেপের ফলে হাই-প্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, যার মধ্যে তিনজন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক এবং এক ডজনেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তা কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। তিনি  চার হাজারেরও বেশি বেআইনিভাবে নিয়োগ বাতিল করেছেন, রাজ্য সরকারকে ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত এসএসসিতে  কারচুপি প্রকাশ করতে বাধ্য করেছেন।

    সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর শেষ দিন বিচারপতি অভিজিৎ  ছিল গঙ্গোপাধ্য়ায়ের। মঙ্গলবার হাইকোর্টে বিচারপতিদের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে যে মামলা ছিল, সেগুলি  বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চে পাঠান হয়েছেন। এ বার থেকে সেই মামলাগুলি শুনবেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়।  বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে ছিল শ্রম এবং শিল্প সংস্থা সংক্রান্ত কিছু মামলা। সেগুলি এ বার থেকে শুনবেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়। সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের যে মামলাগুলি শোনার কথা ছিল, সেগুলি পাঠান হয়েছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। সোমবার শুধু একটি মামলায় নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, যা তাঁর শেষ নির্দেশ। শেষ নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরের বিচারককে বরখাস্তের অনুরোধ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রিপোর্ট দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছেন তিনি। এতদিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তিনি। বিচারপতির কথায় , আমাদের রাজ্যে চৌর্য সাম্রাজ্য চলছে। সেই সঙ্গেই তৃণমূলে যে তিনি যাচ্ছেন না একথা আগেই বলেছিলেন তিনি। এবার রাজনীতিতে এসে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কীভাবে লড়াই চালান, সেটাই দেখার।
  • Link to this news (আজ তক)