অরূপ বসাক: নদীর বুকে পুকুর খনন! একটা বা দুটো নয়, এমন অজস্র পুকুরের দেখা মিলবে। চমকে দেবার মতো ঘটনা হলেও বাস্তবে এমনটাই ঘটে চলেছে মাল ব্লকের ওদলাবাড়ির,গজলডোবার চেল, ঘিস এবং বাগ্রাকোটের লিস নদীর বুকে। ঘটনা হল, বালি-পাথর তোলার জন্য ওদলাবাড়ির চেল এবং ঘিস নদীতে এই মুহুর্তে ১৮টি অনুমতিপ্রাপ্ত প্লট রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই প্লটগুলোর বাইরে খনন কাজ চালানো বেআইনি।
নিয়মে এটাও স্পষ্ট করে বলা আছে যে সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের পরে নদীর বুকে কোনওরকম খনন কাজ করা যাবে না। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, এসবের কোনওটাই মানা হচ্ছে না এই সব নদীতে। দিনের বেলা তো বটেই, এমনকি সন্ধ্যা নামার পর চেল, ঘিস ও লিস নদীর বুকে অজস্র আর্থমুভার,ডাম্পার ও ট্রাক্টরের যে দাপাদাপি শুরু হয়, ভোরের আলো ফোটার আগে পর্যন্ত তা চলতে থাকে। কালিম্পং পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী তিনটির বুকে সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বালি, বজরি ও পাথর তুলে নেওয়ার কাজ চলে। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে।অনুমতিপ্রাপ্ত প্লট ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে বন্যা প্রতিরোধে তৈরি সেচ বাঁধের গা ঘেঁষে ভারী মেশিনের সাহায্যে অজস্র পুকুর খনন করা হলেও নীরব কর্তৃপক্ষ। এদের মদতেই প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে রয়্যালটি চালান ছাড়াই পাচার হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার বালি,বজরি ও পাথর। ক্ষতি হচ্ছে সরকারি রাজস্বের। যদিও ঘটনার কথা জানতে পেরে রীতিমতো উদ্বিগ্ন এলাকার মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে সিকিমের বন্যার কারণে সমতল এলাকায় বহু ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলব। যাতে এইসব বন্ধ করা যায়। মাঝেমধ্যেই নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা মানুষেরা প্রতিবাদ জানিয়ে গাড়ি আটকালেও কিছুদিন বন্ধ থাকে। পরে আবার একই ছবি দেখা যায়। পরিবেশপ্রেমী স্বরুপ মিত্র বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ভরা বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা পাহাড়ি নদীগুলো যে কোনও সময় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে নদী তীরবর্তী গ্রামে ঢুকে যেতে পারে। সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করে বিষয়টি প্রশাসনের গোচরে আনা হবে বলে পরিবেশ প্রেমীরা জানিয়েছে। তবে ইতিমধ্যে মালবাজার পুলিস বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বহু ডাম্পার, জেসিপি আটক করে ফাইনও করেছে। এ ব্যাপারে পুলিস প্রশাসন-এর পক্ষ থেকে আরও বেশি বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালালো হবে বলে জানা গেছে।