হোটেল-রেস্তরাঁয় বসে অর্ডার দিয়ে খাবারের অপেক্ষা। খাবার সার্ভ করার পর গল্প-আড্ডার সঙ্গে তারিয়ে তারিয়ে সেই খাবার উপভোগ করা... কাট টু অফিস। লাঞ্চ টাইম। ঝটপট অফিসের বাইরে আসা, দ্রুত অর্ডার, দ্রুততর ডেলিভারি এবং দ্রুততম গতিতে খাওয়া।
কাট থ্রোট প্রফেশনাল যুগে দ্বিতীয়টিই যে বেশি চেনা ছবি, তা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। আর এই জেট-গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন ট্রেন্ডিং হলো ‘ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁ’। সোজা কথায়, যেখানে অর্ডার দেওয়ার পরে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। খুব দ্রুত হাতে চলে আসে খাবার। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা মেলে গরমাগরমও।দেশের নানা প্রান্তের মতো বাংলা, বিশেষ করে কলকাতায় এই ‘ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁ’ এখন ‘ইন থিং’। ইনভেস্টমেন্ট ইনফর্মেশন অ্যান্ড ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অফ ইন্ডিয়ার (আইসিআরএ) রিপোর্ট বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে দেশে ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁর ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০-২৫ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই জনপ্রিয়তা দেখে উৎসাহী রাজ্য সরকারও।
প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, নিউ জেনারেশনকে আকৃষ্ট করতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ‘হরিণঘাটা মিট’ ব্র্যান্ডের ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁ খোলার পরিকল্পনা হয়েছে। ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁর সুবিধে একাধিক। জায়গা খুব বেশি লাগে না। ছোট্ট একটা দোকানঘর যথেষ্ট। খাবার তৈরির হাঙ্গামা নেই, প্রায় সব আসে বেস কিচেন থেকে। শুধু প্রয়োজনমতো গরম করা আর ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া। খাবার পরিবেশন হয় ফয়েল বা প্লাস্টিকের বোলে।
কেউ খাবার নিয়ে গেলে দেওয়া হয় ব্যাগ বা প্লাস্টিকের মোড়ক। আর লাগে একেবারে সাধারণ কিছু জিনিসপত্র যেমন ইন্ডাকশন কুকার, ডিপ ফ্রায়ার, মাইক্রোআভেন, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমার, ওটিজি, কফি মেশিন ইত্যাদি। রেফ্রিজারেটর, ভিসি কুলার এবং প্যাকেজিং মেশিন রাখতে পারলে আরও ভালো।
ক্রেতাদের বসিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করার ঝামেলা নেই। হয় তাঁরা দাঁড়িয়েই খেয়ে নেন, নয়তো প্যাক করে নিয়ে যান। বঙ্গীয় হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড এক্সসাইজ় লাইসেন্সি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য বসু জানাচ্ছেন, করোনার পর থেকে কলকাতায় ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁর চল বেড়েছে। বিশেষ করে অফিসপাড়ায় এর ব্যবসা খুবই ভালো।
তাঁর দাবি, ‘এখন যাঁরা অফিসে কাজ করেন তাঁদের প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ বাড়ি থেকে টিফিন আনেন না। বাইরের খাবার খান। যেহেতু টিফিনের সময়টা খুব কম, সে জন্য তাঁরা ফাস্ট ফুড পছন্দ করেন। সাধারণত ফয়েলে মুড়ে অথবা বোলের মধ্যে খাবার দেওয়া হয়। একেক জনের গড়ে খরচ পড়ে দেড়শো থেকে দুশো টাকা।’
এই চাহিদা পূরণ করতে অনেক ছোট ছোট সংস্থাও ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁর ব্যবসায় নেমেছে। এতে দুপুরের দিকে বড় রেস্তরাঁগুলোয় ভিড় কমেছে। ফলে অনেক বড় রেস্তরাঁও ‘ক্যুইক’ আউটলেট খুলছে। সেখানে তাদের মূল রেস্তরাঁ থেকে খাবার এনে বিক্রি করা হয়। এমন অনেক ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁ রয়েছে, যাদের বেস কিচেন নেই। তারা বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে প্যাকেটে করে বিক্রি করছে।
রাজাবাজার এলাকায় এ রকম বেশ কয়েকটি বিরিয়ানি সাপ্লাইয়ের দোকান রয়েছে। তারা হান্ডি সিস্টেমে পাইকারি দরে বিরিয়ানি বিক্রি করে। ছোট ছোট দোকানদাররা সেই বিরিয়ানি কিনে নিজেদের ক্যুইক সার্ভিস রেস্তরাঁয় বিক্রি করেন।