এই সময়: বেসরকারি হাসপাতালকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে তাদের নানা পরিষেবার চার্জে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে কয়েক দিন আগে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় পরবর্তী শুনানিতে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেলথ সার্ভিসের (সিজিএইচএস) রেট সব বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ধার্য করে দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এ নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে। এ রাজ্যেও একই রকম অনুশীলন চলছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট সেলের মধ্যেও। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও সংগঠনগুলির বক্তব্য, তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রেট স্থির না হলে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সারা দেশে বন্ধ হয়ে যাবে একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল।কেননা, বিভিন্ন হাসপাতালের ‘স্টেটাস’ যেমন এক নয়, তেমনই শহরভেদে হাসপাতাল চালানোর খরচও আলাদা আলাদা। তাই ব্যবসায়িক স্বার্থেই সরকারের সঙ্গে আলোচনা চাইছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ৬৫ শতাংশ রয়েছে বেসকারি হাসপাতালের দখলে। কিন্তু সেই পরিষেবা পেতে হলে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হয় আমজনতার।
যা এতটাই আকাশছোঁয়া যে স্বাস্থ্যবিমা না থাকলে ঘটিবাটি বেচার জোগাড় হয় সাধারণ রোগীকুলের। এবং দেখা যায়, একই পরিষেবার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের রেটের ফারাকও থাকে। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। উদ্দেশ্য ছিল, শীর্ষ আদালত যেন সুরাহা করে বিষয়টির।
সেই মামলারই অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন পরিষেবার রেট ফিক্স করার নির্দেশ দিয়েছে
সুপ্রিম কোর্ট। যদিও বিষয়টি সরকারের তরফে একপেশে হলে তাতে ঘোর আপত্তি জানাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল সংগঠন। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট সেল এবং ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনের যৌথ উদ্যোগে এ নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বছর দুয়েক ধরেই আলোচনা চলছে।
তাতে নানা প্রস্তাব গৃহীত হলেও এ নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারা যায়নি এখনও। আপাতত যে খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বাংলায়, তাতে বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলির ‘স্টেটাস’ এবং পরিষেবার মান ও বহর দেখে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে এ প্লাস, এ, বি এবং সি— এই চারটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হবে। এবং সেইমতো বিভিন্ন ক্যাটেগরির নানা রেট নির্ধারণ করা হবে।
যদিও সেই কাজটিই এখনও হয়ে ওঠেনি। পূর্ব ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটাল অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বরুয়া বলেন, ‘এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনও আলোচনা এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী, রাজ্য সরকারি কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা ওয়েস্টবেঙ্গল হেলথ স্কিম ইত্যাদির সুবিধা রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। সেগুলির অধীনে আমরা পরিষেবাও দিচ্ছি। সেই রেট বাজারদরের চেয়ে অনেকটাই কম।’
রূপকবাবুর বক্তব্য, ‘বেসরকারি হাসপাতাল চালানোর নানা আনুষঙ্গিক খরচ আছে। আধুনিক চিকিৎসা, বড় বড় জটিল অস্ত্রোপচার এবং নিত্যনতুন বিভিন্ন প্রযুক্তি ইত্যাদির খরচ রয়েছে। তাই সরকার নির্ধারিত দরে পরিষেবা দিলে লাভ কিছু থাকবে না।’ বেসরকারি হাসপাতালের সর্বভারতীয় সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথকেয়ার প্রোভাইডার্স অফ ইন্ডিয়ার মহাসচিব গিরিধর জ্ঞানীও অনেকাংশে একমত রূপকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আগামী শুনানিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হলো এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি অবস্থান। আমরা তাই সংগঠনের তরফ থেকে এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছি আদালতের কাছে।’