• অনলাইন প্রতারণার টাকা ঢুকছে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে
    এই সময় | ০৬ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়, বর্ধমান: অনলাইন প্রতারণার জেরে ভুগছেন গ্রাহকরা। ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। কোনও লেনদেন করতে পারছেন না তাঁরা। বর্ধমান সাইবার থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ওই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছিল। অভিযোগ দায়ের হলে তদন্তে নামে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর সাইবার থানা।এর পরেই ব্যাঙ্কগুলোকে ওই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফ্রিজ হওয়া অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের তালিকায় রয়েছেন স্কুল শিক্ষক থেকে ছোট-বড় ব্যবসায়ী। এমনকী রয়েছেন পুলিশকর্মীর পরিবারের সদস্যও।

    অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ার ঘটনা এক দু’দিনের নয়। কারও ১০ মাস, কারও এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ফ্রিজ হয়ে রয়েছে অ্যাকাউন্ট। এমন গ্রাহকের সংখ্যা পূর্ব বর্ধমানে অন্তত ৫০। কাটোয়ার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা দেবকুমার মণ্ডল সুদপুর হাইস্কুলের শিক্ষক। ২০২৩ সালের ১০ জুলাই থেকে ফ্রিজ হয়ে রয়েছে তাঁর স্যালারি অ্যাকাউন্ট।

    টাকা জমা করা গেলেও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তিনি তুলতে পারছেন না। দেবকুমার বলেন, ‘ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি, ইউপিআই মাধ্যমে আমার অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার ৬৫০ টাকা পাঠানো হয়েছে। পরে ব্যাঙ্ক জানায়, কর্নাটকের দেবাঙ্গিরি থানায় অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই প্রতারণার টাকা আমার অ্যাকউন্টে এসেছে। আমি কিছু না করেও এখন ফল ভুগছি। ব্যাঙ্ক সহযোগিতা করছে না। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।’

    একইরকম ভাবে এক বছর ধরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ব্যবসায়ী অভিরাম মোদক ও তাঁর স্ত্রী অনু সরকার মোদকের বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্ট বন্ধ। অভিরাম বলেন, ‘আচমকা ব্যাঙ্ক থেকে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ার কথা জানানো হয়। গুজরাটের সাইবার সেলে অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে কেউ ১৫২ টাকা পাঠিয়েছে। আমরা জানিও না কে পাঠিয়েছে। এখন আমরা টাকা তুলতে পারছি না। প্রায় ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা রয়েছে ওই অ্যাকাউন্টে।’

    মেমারির বাসিন্দা পুলিশকর্মী সুজয় কৈবর্ত্যর ছেলের অ্যাকাউন্টও একই ভাবে বন্ধ হয়ে রয়েছে। ২০২২-এর নভেম্বর মাসের শেষে একই সমস্যায় পড়েন মেমারি থানার পাল্লা-১ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা পেশায় বাদামবিক্রেতা তাপস তরফদার। গুজরাটের আমেদাবাদের সাইবার সেলে অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়।

    সেই টাকার কিছু অংশ কয়েক ধাপে নাকি ওই বাদামবিক্রেতার অ্যাকাউন্টে চলে আসে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, ইউপিআই মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে টাকা এলে তার নোটিফিকেশন আসার কথা গ্রাহকের মোবাইলে। এই সব ক্ষেত্রে কি নোটিফিকেশন আসেনি? না কি এলেও গ্রাহ্য করেননি গ্রাহকরা?

    রাজ্য পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘সাইবার বা অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ হলে কেন্দ্রীয় পোর্টালে তা নথিভুক্ত হয়। চিহ্নিত করা হয় কোন ইউপিআই বা ওয়ালেটে সেই টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। এর পরে সেগুলো বন্ধ করার জন্য ব্যাঙ্কের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয় অ্যাকাউন্টে।’

    জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে কিছু হয়েছে বলে জানা নেই। তবে ভিন রাজ্যের সাইবার শাখা থেকে হয়ে থাকলে সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘জেলায় অনেকের এই সমস্যা হয়েছে। সঠিক ভাবে না জানার জন্যই এটা হয়েছে। যাঁদের এই সমস্যা হয়েছে, তাঁরা আমাদের সাইবার শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা নির্দিষ্ট সাইবার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি। সংশ্লিষ্ট সেই থানাই একমাত্র সমস্যা মেটাতে পারবে।’
  • Link to this news (এই সময়)