এই সময়, মালদা: খাটিয়ায় শুয়ে থাকা এক মহিলাকে কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছেন মালদার বামনগোলা থানার কার্তিক রায়। খানাখন্দে ভরা রাস্তার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স, টোটো পর্যন্ত সেদিন গ্রামে ঢোকেনি। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নিরুপায় কার্তিকের সেই সাড়ে চার কিলোমিটার হাঁটার ছবি ভাইরাল হয়েছিল গত বছর। অবশেষে মালডাঙার সেই বেহাল রাস্তা পাকা হতে চলেছে।দু’দিন আগে তার শিলান্যাসও হয়েছে। তাতে অবশ্য হেলদোল নেই কার্তিকের। মদিপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও স্ত্রী মামনিকে বাঁচাতে না পারার দুঃখ আজও ভুলতে পারেননি। লোকসভা ভোটের আগে রাস্তার শিলান্যাস নিয়ে কার্তিক বলেন, ‘হ্যাঁ জানি। ওরা অনুষ্ঠান করেছে। কিন্তু কাজ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বিশ্বাস নেই। বউটা মারা যাওয়ার পরে নেতামন্ত্রীরা বলেছিলেন, মা-মরা মেয়েটার দায়িত্ব নেবে। জল পড়া ভাঙা ঘরও পাকা করে দেবে। এখনও কিছুই করেনি।’
গত নভেম্বরে মালডাঙা গ্রামের ওই খবরে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় সারেন। সেই তরজা ফের শুরু হয়েছে শিলান্যাসের দিন থেকে। বিজেপির দাবি, সাংসদ কোটার টাকায় হচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, রাস্তা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন করা টাকায়।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মালতিপুর কেন্দ্রের বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘গ্রামের রাস্তাটা সত্যিই শোচনীয় ছিল। ওই রাস্তায় এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনা জেনে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে পাকা রাস্তার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মাধ্যমে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ দু’এক দিনের মধ্যে শুরু হবে।’
কাজ শুরু হতে এত দেরী কেন? তাঁর দাবি, ‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর পরিকল্পনা ও অর্থ বরাদ্দ করার পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু দেরি হয়েছে। এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।’ খাটিয়ায় করে অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে যাওয়ার ভিডিয়ো সেই সময়ে ভাইরাল করেছিলেন বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিনা কীর্তনিয়া।
এ দিন তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে তৃণমূল নাটক শুরু করেছে। মিলিয়ে নেবেন, এই রাস্তার কাজ শুরু হবে না। এই কাজ হবে স্থানীয় সাংসদ খগেন মুর্মুর সাংসদ কোটার টাকায়। ব্লক অফিসে সেই কাজ অনুমোদন হয়ে পড়ে রয়েছে। ওরা আটকে রেখেছে।’
দুই দলের তরজার মাঝে গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ‘প্রতিবার ভোটের আগে রাস্তা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন নেতারা। কাজ কিন্তু হয় না। শুধু মামনি নয়, আরও অনেকে মারা গিয়েছেন। তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস করা কঠিন।’ মৃত মামনি রায়ের শাশুড়ি নমিবালা বলেন, ‘শুধু মামনি কেন, ওর মা-বাবাও এই ভাবেই মারা গিয়েছিল। একটা রাস্তার জন্য গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেলো। রাস্তাটা না হলে আরও লোক মরবে।’
রহিম বক্সি শিলান্যাসের পরে বলেছিলেন, দুটো ধাপে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা হবে। যদিও শিলান্যাস ফলকে লেখা রয়েছে, ১১৪৫ মিটার রাস্তার কাজের কথা। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রাম থেকে বের হয়ে মূল রাস্তায় যাওয়ার অর্ধেক পথও নয়!