• বন্ডের হিসাব: এসবিআই ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চায়
    এই সময় | ০৬ মার্চ ২০২৪
  • নয়াদিল্লি: আজ, বুধবার ৬ মার্চ ছিল সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ডেডলাইন। নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত রায় দেওয়ার দিন দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এসবিআই-কে প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, আজকের মধ্যে ওই ব্যাঙ্ক বন্ড বিক্রির সব হিসেব জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেবে। কমিশন তা ১৩ মার্চের মধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করবে।কিন্তু তার আগেই সোমবার এসবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্ডের হিসেব জমা দিতে পারবে না। কারণ তারা এখনও তথ্য সংগ্রহ করে উঠতে পারেনি। তাই অন্তত ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হোক। দেশের শীর্ষ আদালত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই আবেদনের ভিত্তিতে কিছু জানায়নি।

    তবে, বিরোধী শিবির অভিযোগ তুলেছে যে এসবিআই-কে দিয়ে আসলে এই আপিল করাচ্ছে বিজেপি। কারণ, তারাই এ পর্যন্ত বিক্রি হওয়া মোট বন্ডের প্রায় ৫৫ শতাংশ অর্থ অনুদান পেয়েছে। সেগুলো কারা দিয়েছেন, তা যাতে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত গোপনই থাকে, তার মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

    এসবিআই শীর্ষ কোর্টকে তার আবেদনে বলেছে যে, বন্ড বিক্রির প্রথম দিন অর্থাৎ ২০১৯-এর ১২ এপ্রিল থেকে বন্ড বাতিল-রায়ের দিন অর্থাৎ এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২২,২১৭টি ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি করেছে এসবিআই-এর বিভিন্ন ব্রাঞ্চ। তার মধ্যে যেগুলো ভাঙানো হয়েছে, সেগুলো সিলড খামে মুম্বইয়ের মেন ব্রাঞ্চে জমা পড়েছে।

    কাজেই ডিকোড করে তা হিসেব করতে হবে মোট ৪৪৪৩৪টি সেটের। সেই বিপুল পরিসংখ্যান এখনও সংগ্রহ করা যায়নি। তাই ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক তাদের। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এই নিয়ে মঙ্গলবার সকালে এক্স-এ প্রশ্ন তোলেন, ‘প্রত্যাশিত ভাবেই স্টেট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মোদী সরকার নামপ্রকাশের সময় চেয়েছে লোকসভা ভোটের পর পর্যন্ত। আসলে এই তথ্য সামনে এলে অনেক ঘুষদাতাদের নামও সামনে আসবে, যারা বিজেপিকে সাহায্য করেছে। এত্ত ভয়!’

    কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেছেন, এই Fraudulent Scheme থেকে বিজেপি সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছে। তাঁর দু’টি প্রশ্ন — ১) হাইওয়ে, বন্দর, বিমানবন্দর, পাওয়া প্লান্টের কনট্র্যাক্ট যেভাবে এই বন্ডের বিনিময়ে মোদীজি তাঁর ক্রোনিদের পাইয়ে দিয়েছেন, তা লুকনোর চেষ্টা চলছে। ২) বিশেষজ্ঞরা বলছেন ৪৪৪৩৪ অটোমেডেট ডেটার হিসেব ২৪ ঘণ্টায় করা সম্ভব, তা হলে এসবিআই-এর আরও প্রায় ৪ মাস লাগবে কেন?

    তিনি এ-ও বলেন, ‘মরিয়া মোদী সরকার এখন এসবিআই-কে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও বুলডোজ় করতে চাইছে।’ গোটা বিষয়ে কংগ্রেস নেতা সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত ছিল না, কিন্তু নির্লজ্জ ভাবে এসবিআই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এসবিআই শুধু ভারতের বৃহত্তম ঋণদাতা নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড ব্যাঙ্ক। এদের ৪৮ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ৬৬,০০০ এটিএম পরিচালনা করে। দেশে এবং দেশের বাইরে প্রায় ২৩,০০০ শাখা রয়েছে। এহেন ব্যাঙ্কের ২২,২১৭ সেট ইলেক্টোরাল বন্ডের ডেটা দিতে এত মাস সময় লাগে? এক ক্লিকেই এই তথ্য পাওয়া সম্ভব। নামগুলি বেরিয়ে আসবে বলেই বিজেপি এত ভয় পাচ্ছে?’

    কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেন, ‘কে কোন দলকে, কতটা, কোন সময়ে অনুদান দিচ্ছে গণতন্ত্রে জানার অধিকার নেই জনগণের?’ তিনি অভিযোগ করেন, রায় ঘোষণার ২০ দিন পর জেগে উঠে এসবিআই বুঝতে পেরেছে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন! আসলে এসবিআই এবং ভারত সরকার দাতাদের নাম গোপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিমকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করে সেই স্কিম বাতিল করে শীর্ষ আদালত।

    সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশের আগেই কেন্দ্রীয় সরকার ১ কোটি টাকা মূল্যের ৮,৩৫০টি ইলেক্টোরাল বন্ড ছাপিয়ে ছিল। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরের পর থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে পর্যন্ত এই বন্ড ছাপানো হয়েছে। সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা আধিকারিক লোকেশ বাত্রা-র করা আরটিআই-এর উত্তরে এই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।

    সেখান থেকে জানা যাচ্ছে ২০১৮-তে ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিমের শুরু থেকে কেন্দ্রীয় সরকার মোট ৬.৮২ লক্ষ ইলেক্টোরাল বন্ড ছাপিয়েছে। যার মধ্যে ১ কোটি টাকা মূল্যের ইলেক্টোরাল বন্ড ছাপানো হয়েছে মোট ৩৩ হাজার। তার মধ্যে বিক্রি হয়েছে ১৫,৬৩১টি। ১৫ ফেব্রুয়ারির রায়ে শীর্ষ কোর্ট বলেছিল, রাজনৈতিক দলগুলিরও নিশ্চয়ই গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে, তবে তা আনলিমিটেড নয়। আর সে অধিকার আর্থিক অনুদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য না কারণ সেই কন্ট্রিবিউশন সরকারি পলিসিকে প্রভাবিত করতে পারে।

    সেটা তাই কোনও ভাবেই বৈধতা পেতে পারে না। ওই রায়ে এ-ও বলা হয়েছিল, পরিচয় গোপন রাখতে দিয়ে, সরকারি এই নীতি এটা সুনিশ্চিত করেছে যে সংশ্লিষ্ট দলের থেকে সুবিধা পেতে যে আর্থিক অনিয়ম করা হয়েছে ও অবৈধ সংযোগ তৈরি করা হয়েছে তা যেন সাধারণ মানুষ জানতে না পারে। তাই বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন ১৬ জুন বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ। তাই নতুন সরকার আসা পর্যন্ত সময় চাইছে এসবিআই।
  • Link to this news (এই সময়)