ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের পীঠস্থান ইসরো। বিগত কয়েক বছর ধরে ইসরোর উন্নতি চোখে পড়ার মতো। বিশ্বের দরবারে ইসরো নিজের জায়গায় আরও পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। দেশের এই স্বনামধন্য গবেষণা কেন্দ্রের চাকরি স্বপ্ন দেখে অনেকেই। স্বপ্ন থাকে ইসরোর মহাকাশচারীর হওয়ার। কিন্তু সেই পথে কী ভাবে পা বাড়ানো যাবে বা ইসরোর মহাকাশচারী হতে গেলে কী যোগ্যতা প্রয়োজন সেসব সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকে না। এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানাব সেসব কথাই।কয়েক দিন আগেই গগনযান মিশনের চার মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মহাকাশে মানুষকে পাঠানোর ইসরোর প্রথম অভিযানে তাঁরাই প্রথমবার সামিল হতে চলেছেন। কাজেই তাঁদের থেকে প্রত্যাশা অনেক বেশি। কী ভাবে ইসরোর মহাকাশচারী হতে আপনিও আবেদন করতে পারবেন তা জানার আগে জেনে নেব এই চার মহাকাশচারীর সম্বন্ধে দুই চার কথা।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রশান্ত বালাকৃষ্ণান নায়ার
গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রশান্ত বালাকৃষ্ণান নায়ার ১৯৭৬ সালের ২৬ অগাস্ট তিরুভাজিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন।ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির ৯৩তম কোর্সে যোগদান করেন তিনি। তার পর এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমির ১৬৩তম পাইলট কোর্সেও ভর্তি হন। সেখান থেকে 'Sword of Honor' শিরোপা পেয়ে পাশ করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ার, ব্যাচের সেরা ক্যাডেটকে ওই শইরোপা দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন ক্যাপ্টেন নায়ার কর্মক্ষেত্রে মোতায়েন হন। । প্রশান্ত বালাকৃষ্ণান নায়ার একজন ক্যাট-এ ক্লাস ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর এবং টেস্ট পাইলট। 3000 ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। প্রশান্ত নায়ার Su-30MKI, MiG-21, MiG-29, Hawk, Dornier, AN-32 ইত্যাদির মতো বিমান উড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি ইউনাইটেড স্টেটস স্টাফ কলেজ, ডিএসএসসি, ওয়েলিংটন এবং এফআইএস, তাম্বারামের প্রাক্তন ছাত্র। তিনি Sukhoi-30 squadron-এর কমান্ড্যান্টও ছিলেন।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজিত কৃষ্ণান
১৯৮২ সালে ১৯ এপ্রিল চেন্নাইয়ে জন্ম অজিত কৃষ্ণানের। NDA-এর প্রাক্তন ছাত্র। অজিত কৃষ্ণানও রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক ও সোর্ড অফ অনার প্রাপ্ত। ২০০৩ সালের ২১ জুন ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফাইটার স্ট্রিমে অন্তর্ভুক্ত হন। ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর এবং টেস্ট পাইলট হিসেবে ২৯০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। Su-30MKI, MiG-21, Mig-21 Bison, Mig-19, JugR, Dornier, An-32-এর মতো বিমান উড়িয়েছেন অজিত।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন অঙ্গদ প্রতাপ
গ্রুপ ক্যাপ্টেন অঙ্গদ প্রতাপ ১৯৮২ সালের ১৭ জুলাই প্রয়াগরাজে জন্মগ্রহণ করেন অঙ্গদ। সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন NDA-তে। ২০০৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি নিযুক্ত হন বিমান বাহিনীর ফাইটার স্ট্রিমে। একজন ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর এবং টেস্ট পাইলট হিসেবে তাঁর প্রায় ২০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
উইং কমান্ডার শুভাংশু শুক্লা
১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখনউতে জন্মগ্রহণ করেন শুভাংশু। NDA-এর প্রাক্তন ছাত্র শুভাংশু। ২০০৬ সালের ১৭ জুন বিমান বাহিনীর ফাইটার স্ট্রিমে যোগান। শুভাংশুও একজন পরীক্ষামূলক পাইলট। তাঁরও ২০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। Sukhoi-30MKI, MiG-21, MiG-29, Jaguar, Hawk, Dornier, An-32-এর মতো বিমান ও যুদ্ধবিমান উড়িয়েছেন শুভাংশু।
মহাকাশচারী হওয়ার প্রশিক্ষণ
ভারতের এই চার নভোশ্চরই রাশিয়ার মস্কোয় গ্য়াগারিন কসমোন ট্রেনিং সেন্টারে ১৩ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দক্ষিণ ভারতের কেরালায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি ইউনিটে চলছে তাদের কঠোর প্রশিক্ষণ। শরীরে ফিটনেস যাতে বজায় থাকে ও ফ্লাইট স্যুট পড়ে যাতে তাঁরা মহাকাশে থাকতে পারেন তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ চলছে চার মহাকাশছারীর।
কী ভাবে ইসরোর মহাকাশচারী হবেন?
আপনি যদি ইসরোর মহাকাশচারী হতে যান তাহলে আপনার যা যা যোগ্যাতা থাকতে হবে-
ভারতীয় নাগরিক হতে হবেইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান বা গণিতে একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা মহাকাশ প্রকৌশলে ডক্টরেট বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং , মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যারোনটিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, বা ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং- এ কারিগরি ডিগ্রি অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে বেশি প্রাধান্য পাবে।উপরে উল্লিখিত শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তাগুলি ছাড়াও, প্রার্থীরা স্নাতক হওয়ার সময় এবং পরে অ্যারোনটিক্স, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, এভিয়েশন, অ্যারোস্পেস, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ক্ষেত্রে অধ্যয়ন করতে পারেন।একজন মহাকাশচারী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত তথ্য
এক্ষেত্রে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাঁদের ফাইটার বিমান ওড়ানোর পেশাদার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে।বিভিন্ন সময়ে ইসরো মহাকাশচারী হওয়ার জন্য সুযোগ দেয় । তখন আপনিও আবেদন পত্র জমা দিতে পারেন।মেডিকেল এবং মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষা এবং স্পেস সিমুলেশনের যোগ্যতা অর্জন করা বাধ্যতামূলক।নির্বাচিত মহাকাশচারীদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ চলবে।শারীরিক প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা পূরণের পাশাপাশি, ভবিষ্যতের মহাকাশচারী হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরও শারীরিকভাবে ফিট হতে হবে।এক্ষেত্রে প্রার্থীর উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ দেখে নেওয়া হয়। শারীরিক কোনও অসুবিধা বা রোগ রয়েছে কিনা যা মহাকাশে যাওয়ার জন্য অনুকূল নয় তাও দেখে নেওয়া হয়।প্রার্থীর দৃষ্টিশক্তি ভালো হতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কোনও শারীরিক সমস্যা ভুগলে তাঁর আবেদন বাতিল হতে পারে।একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য সহ একটি নিয়মিত এবং কার্যকর জীবনধারা মেনে চলতে হবে।ISRO-তে চাকরি ও সুযোগ
সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ইসরো সম্প্রতি বিভিন্ন শূন্যপদে চাকরির সুযোগ প্রকাশ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি হল বিজ্ঞানী/প্রকৌশলী, কারিগরি সহকারী, বৈজ্ঞানিক সহকারী, গ্রন্থাগার সহকারী, টেকনিশিয়ান এবং আরও বেশ কয়েকটি পোস্ট। আবেদনের সময়সীমা শীঘ্রই শেষ হবে। বিভিন্ন চাকরির সুযোগ, ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ এবং স্টার্টআপ সুযোগের জন্য নিয়মিতভাবে ISRO-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।