সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রয়াত স্বনামধন্য চিত্র সাংবাদিক তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্ষীয়ান মানুষটির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার সাংস্কৃতিক মহল ও সাংবাদিক জগৎ। এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর (Sangbad Pratidin) সঙ্গে তাঁর ছিল আত্মিক যোগ। পত্রিকার সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ?রোববার?-এর বিভিন্ন সংখ্যায় তাঁর তোলা নানা ছবি ছিল সম্পদ বিশেষ। তারাপদর প্রয়াণ সংবাদে বিষাদ ?সংবাদ প্রতিদিন? পরিবারেও।
দীর্ঘদিনের সাংবাদিক জীবনে কত শত মণিমুক্তো যে তিনি নির্মাণ করেছেন তাঁর লেন্সের সুচারু প্রয়োগে! উদাহরণ হিসেবে কত ছবির কথাই বলা যায়। কালো পিচরাস্তায় শুয়ে থাকা মৃণাল সেনের যে বিখ্যাত ছবি, তা তুলেছিলেন তিনি। আবার চলন্ত স্কুটার থেকে হাজরা মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে হওয়া হামলার ছবিও সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কর্মদক্ষতারই আর এক অন্যতর উদাহরণ।
এদিন শিল্পীর মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করে নিজের এক্স হ্যান্ডলে মমতা (Mamata Banerjee) লেখেন, ?আমাদের সময়ের স্বনামধন্য চিত্র সাংবাদিক তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের সংবাদে দুঃখিত। আমি তারাপদদাকে চিনতাম। বিভিন্ন বিখ্যাত ঘটনা ও ব্যক্তিত্বের যে কভারেজ উনি করতেন তা আমি পছন্দ করতাম। সমসাময়িক ইতিহাসের এক বিকল্প ভাষ্য তৈরি হত তাঁর ছবিতে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করতে পারি, উনিই ছিলেন একমাত্র ফটোগ্রাফার যিনি দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ে সিপিএম গুন্ডাদের আমাকে খুন করার চেষ্টার ছবি তুলেছিলেন চলন্ত স্কুটার থেকে। সেই সময় আমি ছিলাম বিরোধী দলে।?
তাঁর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ?সংবাদ প্রতিদিন?-এর কর্মী শিল্পী শান্তনু দে জানাচ্ছেন, ?তারাদা ছিলেন আশ্চর্য মানুষ। ছবি তুলতে যে কোনও ঝুঁকির মধ্যে যেতে পারতেন। আর বাধা দিয়েও লাভ হত না। কাজের কাজ তিনি ঠিক করে যেতেন। একবার জোড়াসাঁকোয় রবিশংকরের ছবি তুলতে গিয়েছেন। অথচ মঞ্চে কারও ওঠা নিষেধ। হঠাৎ দেখা গেল পুলিশের তাড়া কে যেন ছুটছে। নজর করতেই বোঝা গেল তারাদা! ছবি কিন্তু তুলেছিলেন। জোড়াসাঁকোর বড় বড় থামের প্রেক্ষাপটে কিংবদন্তি সেতার বাদকের যে ছবি তিনি তুলেছিলেন তা দেখলে মুগ্ধ হতেই হয়।?
রঘু রাইয়ের ভক্ত তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Tarapada Banerjee) ছবি যেন ছিল ম্যাজিক। বিশেষ করে তাঁর ছবিতে আলোর ব্যবহার অবিশ্বাস্য। দুর্গার ত্রিনয়ন আঁকার ছবি তোলার ক্ষেত্রে শিল্পীর হাতের ছায়া প্রতিমার মুখে পড়ে। কিন্তু তারাপদ যখন ছবি তুলতেন সেই ছায়া থাকত অদৃশ্য! কেমন করে তিনি এই জাদু করতেন তা কেউ কখনও জানতে পারেনি। লুঙ্গি পরিহিত শঙ্খ ঘোষ কিংবা ফাঁকা ক্লাসরুমের ?গমগমে? ছবি কেমন অনায়াসে তুলতেন তিনি, তা আজও কোনও উদীয়মান চিত্র সাংবাদিকের কাছে আস্ত টিউটোরিয়াল।
খেতে ভালোবাসতেন। খাওয়াতেও। ?রোববার?-এ থাকাকালীন ফিশফ্রাই এনে প্রায়ই খাওয়াতেন সহকর্মীদের। ব্যক্তিজীবনে হইহই করে বেঁচে থাকা তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় লেন্সে চোখ রাখলেই হয়ে উঠতেন জাদুকর। বুধবাসরীয় সকালে তাঁর প্রয়াণেও সেই জাদু রইল অমলিন। রয়ে গেল তাঁর সৃষ্টিকর্ম। যা থেকে যাবে ভাবীকালের জন্য।