• অর্ধেক আকাশ 'দখল'-এর চেষ্টায় রাস্তায় শাসক-বিরোধী, অঙ্ক কী বলছে?
    আজ তক | ০৭ মার্চ ২০২৪
  • লক্ষ্য মহিলা ভোট। বৃহস্পতিবার নারী দিবসের ঠিক আগের দিন, অর্ধেক আকাশের 'দখল' নিতে রাস্তায় শাসক ও বিরোধী দল। সন্দেশখালিকে ইস্যু করে আক্রমণে নেমে পড়েছেন ছোট-বড় বিজেপি নেতা থেকে শুরু করে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার বারাসতে 'নারী শক্তি বন্দন' কর্মসূচিতে রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। এ দিন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে কলকাতায় মিছিল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্টো দিকে সন্দেশখালি ঢোকার চেষ্টা করলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পলরা। পুলিশের বাধা পেয়ে বিক্ষোভও দেখালেন। 

    ২০২১ সালে রাজ্যে মহিলা ভোটের সিংহভাগ গিয়েছিল তৃণমূলের ঝুলিতে। সেবার বিজেপির বঙ্গ-জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে সেই ভোটেই ভাগ বসানোর চেষ্টায় বিজেপি। সন্দেশখালি অস্ত্রেই তারা বিঁধছে শাসক দলকে। বুধবার বারাসতের সভায় সন্দেশখালির নির্যাতিতা মহিলাদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন মোদী। তিনি বললেন,'এই ভূমিতে নারীশক্তির উপর অত্যাচার করেছে তৃণমূল। মা-বোনদের উপর নির্যাতন করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে। সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে, তাতে যে কারও মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে যাবে। কিন্তু তৃণমূলের যায়-আসে না। রাজ্যে সন্দেশখালি ঝড় উঠবে'।

    পাল্টা তৃণমূল মণিপুর প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের নির্যাতিতাদের সঙ্গে দেখা করলেন না সেই প্রশ্ন করেছে তারা। মোদীর বঙ্গ-সফরের সময়ই আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, 'আশাকর্মীদের বেতন ৭৫০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বেতন বাড়বে ৭৫০ টাকা। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা বাড়বে আইসিডিএস সহকারী বা আইসিডিএস হেল্পারদের বেতন'। 

    মহিলা ভোট নিয়ে কেন দুই দল এতটা তৎপর হয়ে উঠেছে? তা স্পষ্ট হয়ে যাবে নির্বাচন কমিশনের তথ্যেই।

    এ রাজ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩.৭৩ কোটি। পুরুষ ভোটারদের চেয়ে মাত্র ১৫ লক্ষ কম। তবে ভোটদানের হারে এগিয়ে রয়েছেন মহিলারাই। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৮১.৭৯% মহিলা ভোট পড়েছে। পুরুষদের ভোটদানের হার ৮১.৩৫%। সেবার বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন। তৃণমূল ২২টি। 

    সন্দেশখালি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ওই কেন্দ্রে ২০১৯ সালে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮.১৪ লক্ষ। এর মধ্যে ৮৩.৪৯% অর্থাৎ ৬.৭৯ লক্ষ মহিলা ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ওই আসনটি জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। 

    ২০১৯ সালে ১৭টি আসনে মহিলা ভোটদানের হার পুরুষের চেয়ে বেশি ছিল। ওই আসনগুলির মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৮, বিজেপি ৭ এবং কংগ্রেস ২। এর মধ্যে ৭টি আসনে আবার মহিলা সঙ্গে পুরুষ ভোটাদানের হারের ফারাক ৫%। মালদা উত্তরে ফারাক পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটদানের ফারাক ৭.৭৯%।    

    এই পরিসংখ্যান দেখে বোঝা সম্ভব নয়, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মহিলা ভোট কার দিকে গিয়েছিল? তবে এটা ঠিক মহিলা ভোট জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এ রাজ্যে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান মহিলারা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুফল ২০২১ সালে ইভিএমে পেয়েছে মমতার দল। সেই হাওয়া নিজেদের পালে টানতে সন্দেশখালি নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার তার ঝলক দেখা গেল লকেট-অগ্নিমিত্রাদের সন্দেশখালি অভিযানে।
  • Link to this news (আজ তক)