ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আজ জনগর্জন সভা থেকে বাংলার গর্জন শোনাবে তৃণমূল। বাংলাকে দফায় দফায় বঞ্চনার বিরুদ্ধে এই ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলার শাসকদল। যার মূল আকর্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ। ‘বাংলা-বিরোধী বিজেপি’-কে বিসর্জন দেওয়ার ডাক এই মঞ্চ থেকে দেবে তৃণমূল। ‘জনগণের গর্জন, বাংলা-বিরোধীদের বিসর্জন’- এই স্লোগানে সাজানো হচ্ছে মঞ্চ। তবে এবারের ব্রিগেড বেনজির সম্পূর্ণ অন্য কারণে। ব্রিগেডে মঞ্চের ধরনে যে কর্পোরেট ছোঁয়া লেগেছে তা অতীতে বাংলা দেখেনি। বামেদের লাল শালু থেকে গেরুয়া শিবিরের গৈরিক আচ্ছাদন, পরে ফ্লেক্স ও থার্মোকল, সময়ের সঙ্গে ব্রিগেডের চরিত্র বদলালেও এবারে তা অন্য মাত্রা পেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য হল, একেবারে ছক মেনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক ব্রিগেডকে মোট ৫৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ মঞ্চের সামনে দুদিকে ২৮টি করে জোন। মাঝ বরাবর লম্বা প্রায় ১০০ ফুটের আড়াআড়ি যোগচিহ্নের মতো দুটি র্যাম্প। এটাই এবারের অন্যতম চমক। পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণভেদী প্রায় ৩৩০ ফুটের লম্বাটে এই র্যাম্প ধরে মমতা ও অভিষেক নিজেদের বক্তৃতা রাখার সময় কথা বলতে মানুষের মাঝে চলে যেতে পারবেন। এই ধরনের র্যাম্প সাধারণত দেশ-বিদেশের কনসার্টে দেখা যায়, তা-ই তৈরি হয়েছে তৃণমূলের রাজনৈতিক সভায়। সভার আগে তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মঞ্চের উচ্চতা, দৈর্ঘ্য, প্রস্থও। মূল মঞ্চ লম্বায় ৭২ ফুট, গভীরতায় ২০ ফুট। আর মাটি থেকে ১২ ফুট উপরে। মূল মঞ্চের পাশে দু’টি তুলনামূলক ছোট মঞ্চ থাকবে। সেগুলির দৈর্ঘ্য ৬৮ ফুট এবং প্রস্থ ২৮ ফুট। মঞ্চের ব্যাকড্রপে থাকছে এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড।
শুধু ব্রিগেড ময়দানের পরিকাঠামো বন্দোবস্ত নয়, গোটা কর্মসূচিকে বেধে ফেলা হয়েছে এক কর্পোরেট ধাঁচে। মূল মঞ্চে এবং দু’পাশের দু’টি মঞ্চে কারা বসবেন সব তালিকা করা রয়েছে। কোন জেলা পরিষদ সভাধিপতি এক নম্বর মঞ্চে, কোন সাংসদ দুই নম্বর মঞ্চে, কোন বিধায়ক কোথায় বসবেন সবটা ছকে বাঁধা ইতিমধ্যেই। প্রত্যেককে কার্ড সংগ্রহ করে রাখতে হয়েছে শনিবার রাতের মধ্যেই। অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে কেউ দূত পাঠিয়ে, কেউ সশরীরে গিয়ে গলায় ঝোলানোর কার্ড সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। মিডিয়ার জন্য থাকছে নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম। মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। কারণ, বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের ঝড় বইয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল। দেশের রাজনীতিতে সমাজমাধ্যমকে প্রথম অস্ত্র করা দেখিয়েছিল বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট তার সাক্ষী। তার পর ধীরে ধীরে সব দলই কম-বেশি আইটি সেল তৈরি করেছে। তৃণমূলও তাকে ঢেলে সাজিয়েছে গত কয়েক বছরে।
মূল মঞ্চের দুপাশে আরও ২টি মঞ্চ থাকছে। যার একদিকে বিশেষ মঞ্চে থাকবেন বঞ্চিতরা, যাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৩ বছরের বকেয়া পাননি। ১০০ দিনের কর্মী থেকে আবাসের টাকার আবেদনকারী- এঁদের নিয়েই টানা দেড় বছর আন্দোলন চলছে তৃণমূলের। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এঁদের একাংশকে নিয়েই গিয়েছিলেন দিল্লি। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে তাঁদের পাওনা দিতে শুরু করেছে। তাঁদেরই দলের ওই মঞ্চে হাজির করাচ্ছে তৃণমূল। মূল মঞ্চে মমতা-অভিষেক ছাড়া দলের শীর্ষ নেতারা থাকবেন। পাশাপাশি এবার ৬০০ নেতা মঞ্চে থাকবেন। ভিনরাজ্যের দলীয় নেতৃত্বও থাকবেন তাঁদের মধ্যে। আরেকটি অংশে থাকবেন তৃণমূলের সমর্থক বিশিষ্ট জন ও সেলিব্রিটিরা। এই পুরো ব্যবস্থাপনার জন্য মোট ২০০০ ভলান্টিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এই মঞ্চ থেকে একাধিক সম্ভাবনা এবং জল্পনার খবরও ইতিমধ্যে মিলেছে। নেত্রী এই মঞ্চ থেকে প্রার্থিতালিকাও ঘোষণা করে দিতে পারেন বলে দলের একটি অংশ মনে করছে। আবার এই মঞ্চেই বিজেপি থেকে বেশ কিছু মুখের যোগদানের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে দাবি দলের ওই অংশেরই। যে যোগদানকে বিজেপির জমিদারি মনোভাবের জবাব, বাংলাকে বঞ্চনার জবাব বলে দেখাতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের এক্স হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করে এদিন লেখা হয়েছে, ‘ব্রিগেড থেকে বাংলার গর্জনের উত্তেজনা অনুভব করুন। অভিনব এক ব্রিগেডসভার সাক্ষী থাকুন। দলে দলে যোগ দিন।’
গতকাল, ব্রিগেডে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত দুদিনে ব্রিগেডের মাঠ, মঞ্চ আর নিরাপত্তার কথা ভেবে দফায় দফায় পুলিশের বড়কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার, দুই মেয়র পারিষদ সন্দীপ বক্সি ও বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য-সহ দলের আরও নেতৃত্ব ছিলেন। ছিলেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা। গোটা ব্রিগেডকে সিসিটিভিতে মুড়ে ফেলা হচ্ছে।