বিভাস ভট্টাচার্য: একদিকে যদি থাকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে নিজের সেই ‘বিরোধী’ ইমেজকে তুলে ধরা, অন্যদিকে ছিল মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে দলের অবস্থানকে আরও বেশি স্পষ্ট ধরা। এর আগে এতবড় মাপের সভা কবে দলের মহিলা নেত্রীরা পরিচালনা করেছেন তা মনে করে বলতে পারছেন না কেউই। রবিবার ব্রিগেডে গোটা সভা পরিচালনা করলেন দলের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সন্দেশখালির ঘটনার পর বিরোধীরা রাজ্যে মহিলাদের ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উঠেছে মহিলাদের মর্যাদার প্রশ্নটিও। এদিনের এই সভায় দলের দুই পরিচিত মুখকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মমতা তাদের জবাব দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে ৪২ টি লোকসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা যেমন চমক, তেমনি চমক মমতার প্রার্থীদের নিয়ে র্যাম্পে হাঁটা। লোকসভা ভোটে ১২ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এদিকে ভোটের দিন ঘোষণা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তার আগে এই সভা ছিল ভোটের আগে কেন্দ্রীয়ভাবে সবচেয়ে বড় সভা। যে সভার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘জনগর্জন সভা’। রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগে ক্রমাগত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে আসা তৃণমূলের এই সভা যে কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনার’ বিরুদ্ধেই সকলকে দিয়ে ব্যালটে ‘গর্জন’ করার সভা তা পরিষ্কার হয়ে যায় নামকরণের মধ্য দিয়েই। সভা থেকে একের পর এক প্রশ্ন তুলে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন মমতা। রাস্তা থেকে আবাসন বা ১০০ দিনের কাজ যেমন তাঁর অভিযোগের তালিকায় ছিল তেমনি ছিল গ্যাসের দাম নিয়ে কেন্দ্রকে খোঁচা। মমতার বক্তব্য, ‘নির্বাচনের আগে ১০০ টাকা কমিয়ে নির্বাচনের পর ১০০০ টাকা বাড়াবে।’ এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেও যে তাঁর সরকার রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে সেকথা বোঝাতে গিয়ে মমতা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগে কর্মশ্রী প্রকল্পে ৫০ দিনের কাজ চালু করতে চলেছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামী ১মে’র মধ্যে কেন্দ্র যদি আবাসের টাকা না দেয় তবে ১১ লক্ষ লোকের বাড়ি আমরাই করে দেব।’ কিন্তু কাজ করতে গেলে লাগবে মানুষের সমর্থন। আর এই সমর্থন আসতে পারে ভোটের মধ্যে দিয়ে। দিল্লির দিকে না তাকিয়ে বাংলাকে যদি নিজের ক্ষমতায় এগিয়ে যেতে হয় তবে তৃণমূলকে ভোটে জিতিয়ে আনতে হবে। মমতার কথায়, ‘আপনারা যদি না জেতান তবে এই গর্জন আসবে কোথা থেকে?’ এর পাশাপাশি এদিন মমতা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল এরাজ্যে একা লড়বে।