• একতরফা ডার্বি জিতে মোহনবাগান শীর্ষে, প্লে-অফের আশা কার্যত শেষ ইস্টবেঙ্গলের
    ২৪ ঘন্টা | ১১ মার্চ ২০২৪
  • ইস্টবেঙ্গল ১ ( সাউল ক্রেসপো ৫৩')

    মোহনবাগান ৩ ( কামিন্স ২৭', লিস্টন ৩৭' , দিমিত্রি ৪৫+৩)জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাত সাড়ে আটটায় বড়ম্যাচ! ইস্ট-মোহন ডার্বিতে আদৌ মাঠ ভরবে তো? শুধুই তো আর শহর নয়, জেলা থেকেও আবেগের মহোৎসবে শামিল হতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান থেকে মানুষরা রবি সন্ধ্যায় এলেন, তবে একেবারেই ভরল না। তবে বেজায় মন ভরল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের।

    এই ডার্বি ইস্টবেঙ্গলের না মোহনবাগানের হোম ম্যাচ, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় ছিল! এদিন গ্যালারির দিকে তাকিয়ে, বাগান সমর্থকদের আধিক্য দেখে, চোখে এমন ঝিলিমিলিই লেগেছিল। আর ঠিক এই ঝিলিমিলিই পুরো ম্যাচ জুড়ে ধরে রাখলেন হাবাসের শিষ্যরা। যুবভারতীতে নিভে গেল কুয়াদ্রাতের মশালবাহিনী।

    খেলার প্রথম মিনিট পনেরো দেখে মনে হয়েছিল যে, যুযুধান দুই দলের 'প্রেস্টিজ ফাইট'! কিন্তু তারপর মোহনবাগান প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে শুরু করে দেয়। লাল-হলুদ রং ধুয়ে যায় ধীরে ধীরে।  ১২ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ক্যাপ্টেন ক্লেটন, আক্রমণে উঠেছিলেন। ক্লেটনকে রুখে দেওয়ার জন্য মোহনবাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ লাইন  ছেড়ে এগিয়ে এসে বলে পাঞ্চ করতে গিয়েছিলেন। ক্লেটন-বিশালের সংঘর্ষে দুই ফুটবলারই ছিটকে পড়েন। বক্সের ভিতর বিশাল ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন। পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেটন শট নিতে যাওয়ার আগেই লাল-হলুদ সমর্থকরা সেলিব্রেট করতে শুরু করে দেন। কিন্তু তাঁদের থামিয়ে দেন কাইথ। ক্লেটনের দুর্বল শট ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন বিশাল। এখান থেকেই ইস্টবেঙ্গলের খেলা থেকে হারিয়ে যাওয়ার শুরু। মোহনবাগান এরপর সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ইস্টবেঙ্গল নামের কোনও দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না মাঠে। বিরতির ঠিক আগে তিন গোল দিয়ে মোহনবাগান দ্বিতীয়ার্ধের আগেই ডার্বির রং সবুজ-মেরুন করে ফেলে।  ২৭ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। দিমিত্রি পেত্রাতোস বক্সের বাইরে থেকে দুরন্ত শট নিয়েছিলেনন। লাল-হলুদের গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল সেটি সেভ করে দিয়েছিলেন কোনও মতে। কিন্তু রিবাউন্ড বল পেয়ে সুযোগসন্ধানী জেসন কামিন্স ১-০ করে ফেলেন স্কোরলাইন। প্রথম গোলের ১০ মিনিটের মধ্যে ফের গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। গোলের জন্য প্রথম থেকে ছটফট করা দিমির অদৃশ্য বায়োডেটায় লেখা আছে। দিমিত্রি আবার গোল লক্ষ্য করে আগেরবারের মতোই শট নেন। এবারও সেই রিবাউন্ড! পোস্টে লেগে বল পেয়ে যান লিস্টন কোলাসো। লিস্টন আলতো স্পর্শে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। দুই গোলের ক্ষেত্রেই দায়ী একমাত্র ইস্টবেঙ্গলের 'অসাধারণ রক্ষণ'! হিজাজি-নিশু-প্যান্টিচরা যেন ঘুমিয়েই পড়েছিলেন! মোহনবাগানের আক্রমন রুখে দেওয়ার কষ্টটা তাঁরা করলেন না। এরপর বিরতির আগে যোগ করা তিন মিনিটের ইনজুরি টাইমেও মোহনবাগান নিজেদের উদযাপনেই ব্যস্ত রাখল। প্রথম দুই গোলের কারিগর দিমি এবার গোল পেলেন অবশেষে। বক্সের ভিতরে, নন্দকুমার ফাউল করায় মোহনবাগান পেনাল্টি পেয়েছিল। এই গোল পা ছাড়ার কথাও ছিল না দিমির।প্রথমার্ধে তিন গোল হজম করা লাল-হলুদের প্রতিশোধের মশাল জ্বলে ওঠে। এটাই স্বাভাবিক ছিল যদিও। ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তাঁরা। লাল-হলুদ গ্যালারিকে সেলিব্রেশনে মাতিয়ে দেন সাউল ক্রেসপো। গোলের কারিগর অবশ্যই ক্লেটন। বক্সের ভিতর অনবদ্য ভাসানো ক্রস বাড়ান তিনি। ক্রেসপো ছুটে এসে বুকে ট্যাপ করেই পায়ে নামিয়ে, দেখার মতো গোল করেন। বিশালের কিছু করারই ছিল না কার্যত। তবে ওই এক গোলই ইস্টবেঙ্গলের সান্ত্বনা পুরস্কার। আর তারা কোনও গোলই করতে পারেনি। তবে ম্যাচের ৯৪ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি পেতেই পারত। তবে গোল করেও কোনও লাভ হত না। যা হওয়ার বহু আগেই হয়ে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক ভালো খেলল। তবে এটা ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরাও মেনে নেবেন যে তাদের প্রতিপক্ষ দল ধারে ও ভরে বহু মাইল এগিয়ে। আইএসএলে আজও লেসলি ক্লডিয়াস সরণির ক্লাব গঙ্গাপাড়ের শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবকে হারাতে পারল না।
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)