অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: সামনেই লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে তুমুল উত্তেজনা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে চিত্র দেখা গিয়েছিল এবার প্রায় সেইরকমই দলবদলের ঘনঘটা শুরু হয়েছে।আবার এরই মাঝে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে শাসকদল আর তাদের টক্কর দিতে তৈরি বামেরা। আইএনডিআইএ জোটকে কার্যত ভেঙে দিয়ে ব্রিগেডের ময়দান থেকে ৪২ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফ কথা, 'বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। অল ইন্ডিয়ায় কী করব না করব আফটার ইলেকশন ভাবব'। জোট নিয়ে অধীর চৌধুরীকে নিশানা করেছিলেন অভিষেক।এরপরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বলেছিলেন, 'কংগ্রেস সবসময়ই চেয়েছিল, ইন্ডিয়া জোট ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করুক'।বাম এবং কংগ্রেস এখনও নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি বরং জানা গিয়েছে, যে দুই দলই আসন সমঝোতার আলোচনার পথ এখনও খুলে রেখেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও আসন সমঝোতা হবে কি না সেই বিষয়ে জটিলতা থাকলেও বেশ কিছু আসনে নিজেদের প্রার্থীর নামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি থাকতে চাইছে বাম নেতৃত্ব। এই বিষয়ে দলের পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই নামে সিলমোহর পড়বে বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের ঘোষণা করা ৪২ আসনের প্রার্থীদের নামের মধ্যে বেশ কিছু চমক দেখা গিয়েছে। বহরমপুর আসনে প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে মনোনয়ন দিয়ে একটি বড় চমক দেয় মুখ্যমন্ত্রীর দল। সুত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা সম্পূর্ণ হলে বহরমপুর আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হতে পারেন অধীর চৌধুরী এবং সেখানে তাঁদের সমর্থন দেবে বামেরা।যদিও বহরমপুরের পাশেই মুর্শিদাবাদ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এর আগে তিনি ২০১৪ সালে রায়গঞ্জ থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করলেও তৃতীয় স্থানে ছিলেন ২০১৯ সালে। এইবার তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে লড়াই করতে পারেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রীরামপুর আসনে বিজেপি-র অভিনেত্রী প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৯০ দশকের বড় পর্দার জনপ্রিয় নাম রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে বিরাট চমক দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। দুই অভিনেত্রীর হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের মাঝে বামেদের তরফে প্রার্থী হতে পারেন আরেক কম বয়সি নেত্রী দীপ্সিতা ধর। ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বালি আসনে থেকে সিপিআই(এম)-এর প্রার্থী ছিলেন। এবার তাঁর কাধেই বর্তাতে পারে বামেদেরকে এই হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের বৈতরণী পার করার দায়িত্ব।অন্যদিকে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা আসন যাদবপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। গতবার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সেলিব্রিটি মুখ মিমি চক্রবর্তী। বিজেপি-র হয়ে লড়েন অনুপম হাজরা এবং বামেদের প্রার্থী ছিলেন বর্তমান রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সেই নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিল বামেরা।এবার সেই ফলাফল পালটে দেওয়ার দায়িত্ব পেতে পারেন পোড় খাওয়া আরেক বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী। বর্ষীয়ান এই নেতা ২০০৪-২০০৯ সময়কালে ইউপিএ-১ সরকারের আমলে এই আসনে জয়ী সাংসদ ছিলেন। আরেক অতি পরিচিত বাম ছাত্রনেতার নাম এই আসনের ক্ষেত্রে সামনে এলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীর উপরেই ভরসা রাখবে বলে সুত্র মারফত জানা গিয়েছে। পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে যে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সাড়া ফেলে দেওয়া বাম নেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়কে এই নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে না বামেদের তরফে। ২০২৪ সালের শুরুতে বামেদের ‘ইনসাফ যাত্রা’ রাজ্যজুড়ে বাম আন্দোলনের ঢেউ তোলে। সেই যাত্রার শেষে ব্রিগেড সমাবেশকে ঘিরেও দেখা গিয়েছিল জনতার ঢল। সেই ব্রিগেডেই মুখ্য বক্তা হিসেবে দেখা যায় মীনাক্ষি মুখার্জিকে। এরপরেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা দেখা দেয় যে বিধানসভার পর এবার লোকসভা নির্বাচনেও ময়দানে দেখা যাবে মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়কে। যদি তাঁকে প্রার্থী না করা হয় তাহলে দলের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কর্মীদের মধ্যে কীভাবে পড়বে সেইদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।