• 'দিদি ভরসা', ক্যা নিয়ে আতঙ্কে সংখ্যালঘুরা
    আজকাল | ১৩ মার্চ ২০২৪
  • পল্লবী ঘোষ: যতদূর চোখ যায়, ততদূর নারীমুখ। মঙ্গলবার হাবড়ার জনসভায় উত্তর ২৪ পরগনার মহিলাদের উপস্থিতি মমতা-বিরোধীদের জন্য যেন এক কড়া জবাব।কেন্দ্রের তরফে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হতেই, গ্রামজুড়ে আতঙ্কের রেশ। এরপরই সেই অঞ্চলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। কী বলবেন তিনি? তা শুনতেই দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন মানুষ। যার সিংহভাগ মুসলিম এবং মতুয়াদের একাংশ। তখনও মমতা এসে পৌঁছননি। সভায় এক জায়গায় জড়ো হয়ে বসেছিলেন গুমা, বিড়ার বাসিন্দারা। তাঁরা ভীত। আসামের মত ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে না তো? নূরনাহার বিবি মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "এত বছর ধরে এপার বাংলায় থাকি। কালকের ঘোষণার পর ভয় লাগছে। আমাদের কি তাড়িয়ে দেওয়া হবে? আমাদের কাছে নথি বলতে কেবলমাত্র, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড। আর কিছু নেই। আমার কাছে বাবার বার্থ সার্টিফিকেট নেই। ভোটের পর ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব, জানি না। এখন আমাদের ভরসা মুখ্যমন্ত্রী। দিদি পাশে থাকলে, আমাদের ভিটে থেকে কেউ তাড়াতে পারবে না।" রোশনারা বিবির দাবি, "আমাদের চার পুরুষের সংসার গুমায়। ২০১৪ সালের পরেও অনেক আত্মীয় এসেছেন। আমরা ২০১৯ সালে ভোট দিয়েছি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোট দিয়েছি। এবারও দেব। ভোটার তালিকায় নাম থাকার পরেও কেন নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে? আমরা তো বাংলারই বাসিন্দা। নতুন করে দরখাস্ত করে আবার কেন নাগরিক প্রমাণ করতে হবে? দিদি যদি একবার আশ্বাস দেন, তাহলে বাঁচি!" মমতা পৌঁছতেই, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন মহিলারা। সিএএ নিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই সকলকে সাবধান করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দরখাস্ত করবেন না। করলেই বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। আপনাদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। মুসলিম ভাইবোনেদের তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত এটা।" মমতার কথা শুনে অনেকেই আশ্বস্ত হলেন খানিকটা। মুখে তখন হালকা হাসি। বক্তব্যের শেষে মমতা বলেন, "আমি কাউকে উদ্বাস্তু হতে দেব না। অনেক লড়াই করে ওপার বাংলা এসেছেন যাঁরা, তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়া করতে দেব না। লাঞ্ছিত হতে দেব না। দরকার হলে আমি নিজের জীবন দিতে তৈরি।" হাততালিতে ফেটে পড়ে জনতা। রোশনারা, নূরনাহারদের চোখ চিকচিক করে ওঠে। সভাশেষে কপ্টারে উঠে উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হন নেত্রী। ধুলো উড়ছে মাঠের পাশে। তখনও কপ্টারের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াচ্ছে জনতা। রোশনারারা বললেন, "এই আশ্বাসটুকুর দরকার ছিল। আজ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাব।"
  • Link to this news (আজকাল)