• 'কাগজ দেখাব না, আবেদনই করব না', সিএএ নিয়ে ক্ষুব্ধ সীমান্তের গ্রামবাসীরা ...
    আজকাল | ১৪ মার্চ ২০২৪
  • পল্লবী ঘোষ: পিরোজপুর। এপারের শেষ গ্রাম। কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশ। বহু বছর আগে এত নিয়মের বেড়াজাল ছিল না। তাই ওপার থেকে এপার বাংলায় অবাধ যাতায়াত ছিল মানুষের। দেশভাগের অনেক আগেই এপারে চলে এসেছেন, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকতেও কয়েক দশক পর আবার কেন ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে? কেন্দ্রের তরফে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন লাগু করতেই তীব্র রোষ গ্রামবাসীদের। পিরোজপুরের বাসিন্দা দীপক ঘোষের বক্তব্য, "সিএএ আমরা কোনওভাবেই সমর্থন করছি না। আমরা ভারতবাসী। বিগত ৫০ বছর ধরে ভোট দিচ্ছি। ভোটার কার্ড বড় পরিচয়পত্র। ভোটার কার্ডের জন্যেও একসময় কত আন্দোলন করেছি। আমাদের কাছে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আছে। আমরা নতুন করে আবার আবেদন করব কেন?" পিরোজপুরের পাশেই আরেকটি এক গ্রাম খেদাপাড়া। সেখানকার চিত্রটাও এক। নিত্যদিনের কাজের মাঝেই সবার আলোচনায় উঠে আসছে সিএএ প্রসঙ্গ। কারও চোখেমুখে আতঙ্ক, কেউ কেউ আবার বিষয়টিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে নারাজ। খেদাপাড়ার বাসিন্দা অতনু মণ্ডল বললেন, "কেন্দ্রের সরকার বেইমানি করছে। ভারতের মানুষের ভোটে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েও প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভোটাধিকারকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিএএ লাগু করার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের সকলের রক্ষাকবচ সংবিধান। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে যে সরকার আইন লাগু করে, তা ভবিষ্যতের জন্য বিপদজ্জনক।" সীমান্তবর্তী আরেকটি গ্রাম মধ্য ছয়ঘরিয়া। ভোটের আবহে বেলার দিকে সরগরম চায়ের ঠেক। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা গণেশ ঘোষ বললেন, "এই গ্রামে ওপার বাংলার মানুষের সংখ্যাই বেশি। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে নরেন্দ্র মোদি বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দিবাস্বপ্ন দেখিয়ে তার বেশিরভাগই পূরণ করেননি। নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে অসমের মতো যে বাংলাতেও ডিটেনশন ক্যাম্প করবেন না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। আমাদের গ্রামের অনেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অনেকের কাছেই সমস্ত নথি নেই। এসময় একমাত্র ভরসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।" মঙ্গল ভট্টাচার্যের কথায়, "এতকাল ধরে আমরা ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করছি। এখন আবার নতুন করে নাগরিক প্রমাণ করার কী প্রয়োজন? কোনও কাগজ দেখাব না।" ভীত জয়ন্তীপুরের বাসিন্দারা। সীমান্ত লাগোয়া এ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অনেকে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন। নথি নেই। সে কথা জানাজানি হতেই যদি ভিটে ছাড়া হতে হয়! কেউ কেউ বললেন, "হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেন। আর মুসলমানরা? আমাদের ভোট তো এতকাল গণ্য করা হয়েছে। আজ কেন দেশ থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে? এ আইন সর্বনাশা।"
  • Link to this news (আজকাল)