ভুয়ো প্রেসক্রিপশন বানিয়ে জালিয়াতি, ২০ লক্ষ টাকা বান্ধবীর অ্যাকাউন্টে! প্রতিবাদ করায় খুন ব্যবসায়ী?
প্রতিদিন | ১৫ মার্চ ২০২৪
অর্ণব আইচ: ভবানীপুর ব্যবসায়ী খুন কাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভুয়ো রোগীকে সামনে রেখে ওষুধের ব্যবসার বিপুল টাকা হাতানোর ছক করেছিল ‘খুনি’ অনির্বাণ। তার জন্য ব্যবসায়ী ভাব্য লাখানির অজান্তেই তাঁর সংস্থাকে সঙ্গে রেখে সে শুরু করেছিল জালিয়াতি। লাখানি তা জানতে পেরেই প্রতিবাদ করেন। তার এই জালিয়াতি সবাইকে জানিয়ে দেবেন বলেন।
গোয়েন্দাদের মতে, এর পরই অনির্বাণ তাঁকে খুনের ছক কষে। আগেই লাখানি তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৫০ লাখ টাকা ফেরৎ পেতে অনির্বাণকে চাপ দিচ্ছিলেন। লাখানির কাছ থেকে নেওয়া ৫০ লাখ টাকার বড় অংশ ফেরৎ দেওয়ার নাম করেই নিমতার বাড়িতে ডেকে তাঁকে খুন করে নিমতার অনির্বাণ গুপ্ত। ভবানীপুরের বাসিন্দা ও বালিগঞ্জের ব্যবসায়ী ভাব্য লাখানির খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। লালবাজারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, লাখানির কাছ থেকে হাতানোর ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা অনির্বাণ রেখেছিল তার এক বান্ধবীর অ্যাকাউন্টে। ওই বান্ধবী পানশালার গায়িকা। বাকি টাকা আরও দু’টি অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। তবে ওষুধের ব্যবসায়ী অনির্বাণ বিলাসবহুল জীবনযাপন করত। তাই বেশ কয়েক লাখ টাকা সে উড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী, খুনের ঘটনায় অনির্বাণের সঙ্গী তথা অন্য অভিযুক্ত সুমন দাসকেও দেহ লোপাটের জন্য দু’লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশের কাছে খবর।
উল্লেখ্য, গত সোমবার নিখোঁজ হন ভাব্য লাখানি। তাঁকে নিমতার বাড়িতে ডেকে ব্যাট-উইকেট দিয়ে মেরে ও শ্বাসরোধ করে খুনের পর দেহটি ছাদের জলের ট্যাঙ্কের তলায় ইটের গাঁথনি করে দেয় অনির্বাণ গুপ্ত ও সুমন দাস। পুলিশ জানিয়েছে, এজরা স্ট্রিটের ওষুধের ব্যবসায়ী ভাব্য লাখানিকে কম দাম তথা বেশি ডিসকাউন্টে ওষুধ সরবরাহ করত অনির্বাণ। কিন্তু সে জানতে পারে যে, কঠিন রোগে ভুগছেন, এমন রোগীর আত্মীয়দের বাগরি মার্কেটের হোলসেলাররা আরও বেশি ডিসকাউন্ট দেন। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত নথি বা প্রেসক্রিপশন। সেরকমই ভুয়ো রোগীর নথি বা প্রেসক্রিপশন তৈরি করে অনেক বেশি ডিসকাউন্টে ওষুধ সংগ্রহ করতে থাকে অনির্বাণ। ক্রমে একটি ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে তার মাধ্যমে কঠিন রোগীদের জন্য ওষুধ কেনা হচ্ছে বলে জানাতে শুরু করে সে। লাখানিদের দোকানের সুনাম থাকার কারণে ভাব্য লাখানির অজান্তেই তাঁর নাম সঙ্গে নিয়ে ওই ভুয়া সংস্থার মাধ্যমে ওষুধ সংগ্রহ করতে থাকে সে। তার জন্য ভুয়ো মেলও পাঠাতে থাকে অনির্বাণ। সম্প্রতি এই বিষয়টি জেনে যান লাখানি। অনির্বাণের কারণে তিনিও জালিয়াতির অভিযুক্ত হতে পারেন, এই ভয়ে তিনি প্রতিবাদ জানান। অনির্বাণকে প্রশ্ন করেন। বাদানুবাদও হয়। গোয়েন্দা পুলিশের মতে, এর পরই অনির্বাণ তাঁকে খুনের ছক কষে। এই ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে লালবাজারে অনির্বাণকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।