• National Medical Commission: ডিগ্রি, না এক্সপিরিয়েন্স! তর্ক ক্রিটিক্যাল ‘ইন্টেনসিভিস্ট’-এ
    এই সময় | ১৮ মার্চ ২০২৪
  • অনির্বাণ ঘোষ

    ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ কারা? এই স্পেশ্যালিস্টের সংজ্ঞা কী? আপাতত এই প্রশ্নেই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দেশের ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবা দেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সারা দেশে একেবারে জেলাস্তরে বিকেন্দ্রীকরণ চায় ইন্টেনসিভ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবার। সে জন্য দরকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে দেশে। তাই ‘ইন্টেনসিভিস্ট’ নামের এই পদে কারা দায়িত্ব সামলাবেন, তা নিয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছে মন্ত্রক। আর তা থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সংঘাত তৈরি হয়েছে ডিগ্রি বনাম অভিজ্ঞতার। তাই সংজ্ঞা জানতে চেয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)-কে চিঠি দিয়েছেন ডিগ্রিধারী ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞরা।

    কেননা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেসের তরফে ইন্টেনসিভিস্ট তকমা শুধু এমডি কিংবা ডিএম ডিগ্রিধারীদেরই দেওয়া হয়নি, হয়েছে অন্যদেরও। যাঁদের এই বিষয়ে ডিপ্লোমা কিংবা ফেলোশিপ রয়েছে কিংবা যাঁদের ইন্টেনসিভ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁদেরও। যদিও সেই সব ফেলোশিপ কিংবা সার্টিফিকেট অথবা ডিপ্লোমাগুলি এনএমসি-র কাছে অনুমোদিতই নয়। সেগুলি দেয় মূলত ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন (আইএসসিসিএম) নামে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞদেরই সংস্থা।

    আইএসসিসিএম পরিচালিত ক্রিটিক্যাল কেয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সচিব, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর বলেন, ‘মানছি যে, সরকারি ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য যে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক লাগবে, তাতে সকলকে ডিগ্রিধারী পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটাও ঠিক যে অনেকেই এঁদের মধ্যে নিজেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাবি করতে পারেন। মুড়ি-মুড়কি তো একদর হয়ে যাবে। সে জন্যই স্পষ্ট একটা সীমারেখা জানতে চেয়ে সংজ্ঞাটা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

    প্রবীণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ শুশ্রূত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিষয়টা অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে নতুন। মাত্র বছর দশেক হলো এমডি ডিগ্রি চালু হয়েছে। অতি সম্প্রতি ডিএম, ডিএনআরবি কোর্স শুরু হয়েছে। ফলে ডিগ্রিধারীর সংখ্যা অল্প। পরিষেবা টিকিয়ে রাখতে গেলে এই পরিষেবা হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকা লোকদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমার তরুণ বয়সে তো ডিগ্রি ছিল না। অথচ আমি তো এখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার পড়াই। সমস্যাটা কোথায়?’ তবে তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে ডিগ্রিই একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত। কিন্তু এখনও সে সময়টা আসেনি।

    তরুণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ রজত চৌধুরীও একমত। তাঁর বক্তব্য, ‘শুধু ডিগ্রিধারীদেরই যদি মান্যতা দেওয়া হয়, তা হলে এত দিন ধরে যাঁরা সফল ভাবে এই পরিষেবাটা টিকিয়ে রাখলেন, তাঁদের প্রতি অন্যায় করা হবে। অথচ তাঁরাই তো আজ শিক্ষক।’ আর এক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সুগত দাশগুপ্ত জানান, আমাদের দেশে একমাত্র এনএমসি এবং ন্যাশনাল বোর্ড অফ এক্সামিনেশনস থেকেই ডিগ্রি দেওয়া হয় সব ডাক্তারি শাখায়। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের ক্ষেত্রেও তারাই ডিগ্রি দেয়। সেই ডিগ্রির উল্লেখ যে সব চিকিৎসকের মেডিক্যাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে থাকবে, আইনত একমাত্র তাঁরাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ।

    সুগত বলেন, ‘যাঁদের এই ডাক্তারি নথি নেই, তিনি নিজেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে দাবি করতে পারেন না। বড়জোর ইন্টেনসিভিস্ট কিংবা অন্য কিছু বলতে পারেন। অথবা বলতে পারেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবায় তিনি দক্ষ। কিন্তু দেশের আইনে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট বলার কথা নয়।’ আর এক প্রবীণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার প্রথম ডিগ্রিধারী চিকিৎসককে যিনি শিক্ষাদান করেছেন, তাঁর কিন্তু কোনও ডিগ্রি ছিল না। তা বলে কি তাঁর সম্মান নেই!’
  • Link to this news (এই সময়)