• Tourism Industry : দেড় মাসের ভোটপর্বে ধাক্কা দেশের ট্যুরিজমে
    এই সময় | ১৮ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: বৈশাখ পড়ে গেলে একবার একটা শর্ট ট্যুরে হিমালয় দেখে আসার পরিকল্পনা ছিল চার বন্ধুর। তত দিনে নতুন অর্থবর্ষ শুরু হয়ে যাবে। কাজেই অফিসে বা ব্যবসায় চাপ কিছুটা কমই থাকবে। সেই সময়ে একবার সিল্ক রুটের দিকে চার-পাঁচদিনের একটা ট্যুর মন্দ কী? কিন্তু সব পরিকল্পনায় জল পড়ে গেল ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই। ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ভোট এবং ৪ জুন গণনা। অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত পুরো দেড় মাস আর কোথাও নড়ার উপায় নেই। অগত্যা বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিলই করতে হলো।

    স্কুল-কলেজের সব রকমের পরীক্ষা শেষ। গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে অথবা পড়ব-পড়ব করছে। বেড়ানোর জন্য একেবারে ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’। কিন্তু দেড় মাসের দীর্ঘ ভোটপর্বে এই সময়টা পুরোপুরি ‘নষ্ট’ বলে মনে করছেন ভ্রমণপিপাসুর দল, পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। রাজ্যের দক্ষিণ অংশে যখন ভোট কিছুটা দূরে, সেই সময়ে উত্তরে ভোটের প্রস্তুতি তুঙ্গে। আবার উত্তর যখন ভোটের পালা চুকিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছে, সেই সময়ে দক্ষিণের শিরে সংক্রান্তি। অতএব কোনও দিক থেকেই কোনও পরিকল্পনা করা বেশ ঝামেলার।

    পাঁচ বছর অন্তর বছরের এই সময়টাকেই লোকসভা ভোটের জন্য বেছে নেওয়া হয়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটও এই সময়েই হয়েছিল এবং কয়েক দফায়। তবু সে বছরের সঙ্গে ২০২৪-কে মেলাতে পারছেন না পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ‘এক মাস ধরে ভোট মানেই পর্যটনের ব্যবসার অন্তত ১৫-১৮% ক্ষতি। ২০১৯-এ পর্যটন পুরোদমে চলেছে ঠিকই। কিন্তু করোনার দৌলতে ২০২০-২২ পর্যটন ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেই পরিস্থিতিতে ২০২৪-এ দেড় মাস ব্যবসা বন্ধ মানে বড় ধাক্কা।’

    রাজ্যের ইকো ট্যুরিজ়ম বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজ বসু বলছেন, ‘লোকজন ইতিমধ্যেই বেড়ানো ক্যানসেল করতে শুরু করেছেন। ওঁদের দোষ দেওয়া যায় না। ভোটের কাজের জন্য গাড়ির সংখ্যা কমতে শুরু করবে ভোট আসার এক সপ্তাহ আগে থেকেই। এত টাকা খরচ করে যাঁরা বেড়াতে যাবেন, তাঁরা তো হোটেল-রিসর্টে বসে থাকার জন্য যাবেন না!’

    রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের (ট্যাব) বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রশান্ত মাঝি বলছেন, ‘ভোট তো গোটা দেশেই হবে। সুতরাং শুধু যে উত্তরবঙ্গ বা সিকিম যাওয়া প্রভাবিত হবে তা নয়। এ বছর কাশ্মীর ও হিমাচল বেড়ানোর প্রবণতা খুব বেশি ছিল। যাঁরা ওই দিকে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরাও প্রোগ্রাম ক্যানসেল করছেন।’ পর্যটন ব্যবসায়ী অমিতাভ সরকারের মতে, ‘ভোট মানেই সব পরিকল্পনা ঘেঁটে যাওয়ার আশঙ্কা। যদি বেড়ানোর জন্য কোনও রকমে একটা গাড়ি ম্যানেজ করতেও পারেন, তা হলেও কোথাও গন্ডগোলে ফেঁসে যাওয়া আশঙ্কা থাকেই। বেড়াতে গিয়ে অচেনা জায়গায় কে আর ঝামেলায় জড়াতে চায়?’

    পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করার সময়ে সব দিক মাথায় রেখে এগোলে সবারই মঙ্গল। ১৯ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত গোটা দেশে ভোটপর্ব চলবে। ফল ঘোষণার পর সব কিছু স্বাভাবিক হতে আরও চার-পাঁচ দিন তো লাগবেই। অর্থাৎ জুনের ১০ তারিখের আগে পর্যটন আগের অবস্থায় আসবে না। এর পরেই দেশে বর্ষাকাল শুরু হয়ে যাবে। ১৫ জুন থেকে সব ক’টা জঙ্গল বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ভোটের জন্য গরমের গোটা সিজ়নেই পর্যটন ব্যবসায় বিপুল ক্ষতি।
  • Link to this news (এই সময়)