• Electoral Bond Case: ইলেক্টোরাল বন্ডে ফার্মার ৯০০ কোটি, ওষুধ তাই মহার্ঘ?
    এই সময় | ১৮ মার্চ ২০২৪
  • অনির্বাণ ঘোষস্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেলাগাম খরচের নেপথ্যে কি কাজ করেছে নিবার্চনী বন্ডও? হাসপাতাল গোষ্ঠী এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর থেকে বন্ডের চাঁদা পেতেই কি আলগা হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের ফাঁস? এবার এই প্রশ্নও উঠছে দেশের সর্বত্র। ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) দেওয়া যে তথ্য সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী এবং ৩৬টি ওষুধ কোম্পানি মিলে প্রায় ৯০৩ কোটি টাকার ইলেকটোরাল বন্ড কিনেছে।

    অধিকাংশই নামকরা কোম্পানি যাদের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ বাজারে দেদার চলে। ফলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠেছে, কেন ওষুধের দাম গত কয়েক বছরে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকলেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণে তৎপর নয়! পাঁচ রকম অঙ্কের ইলেক্টোরাল বন্ড হয়— ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ আর ১ কোটি টাকার। দেখা গিয়েছে, বন্ডের চাঁদায় সব ফার্মা কোম্পানিকে টপকে গিয়ে পয়লা নম্বরে রয়েছে হায়দরাবাদের যশোদা সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গোষ্ঠী।

    অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানা জুড়ে রয়েছে এই গোষ্ঠীর চেন ব্যবসা। তারাই ছ’ দফায় ১ কোটি টাকা অঙ্কের মোট ১৬২ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে গত তিন বছরে। ২০২১-এ ১৭টি বন্ড, ২০২২-এ ৮৯টি বন্ড এবং ২০২৩-এ ৫৬টি বন্ড। এর পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি ডক্টর রেড্ডি’জ় ল্যাবরেটরি যারা ৮৪ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। ওষুধ কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে (সার্বিক ভাবে তৃতীয়) রয়েছে টরেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস যারা ৭৭.৫ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। তার পর রয়েছে ন্যাটকো ফার্মা (৬৯.২৫ কোটি) ও সিরাম ইনস্টিটিউট (৫২ কোটি)। দেখা যাচ্ছে, ভারতী ওষুধ বাজারের অন্যতম বড় কোম্পানি সান ফার্মাও ৩১.৫ কোটি টাকা মূল্যের ৩৬টি বন্ড কিনেছে ২০১৯ সালে। কোম্পানির নামে নয়, নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৬ কোটি টাকার বন্ড কিনেছেন বায়োকন প্রধান কিরণ মজুমদার শ’।

    বন্ড কেনার তালিকায় রয়েছে অরবিন্দ ফার্মা (৫১.১ কোটি), অজন্তা ফার্মা (৪ কোটি), অ্যালেম্বিক (১০.২ কোটি), ইন্টাস (২০ কোটি), গ্লেনমার্ক (৯.৭৫ কোটি), ম্যানকাইন্ড (২৪ কোটি), প্যানাসিয়া বায়োটেক (১ কোটি), পিরামল ফার্মা (৩ কোটি), হেটেরো ফার্মা (৫ কোটি), সিপলা (৩৯.২ কোটি), জাইডাস (২৯ কোটি), মাইক্রো ল্যাব (১৬ কোটি), ভারত বায়োটেক (১০ কোটি)-সহ সিংহভাগ নামী দেশীয় ওষুধ কোম্পানিই। যেহেতু ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে অর্থপ্রাপ্তির নিরিখে বিজেপি বাকিদের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে, তাই মনে করা হচ্ছে ফার্মা কোম্পানিগুলির কেনা বন্ডেরও একটা বড় অংশ গিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদলের তহবিলে।

    বিভিন্ন মহল এই বন্ডের বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রশ্নে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মেডিসিনের প্রসিদ্ধ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ওষুধের দাম কেন বাড়ছে, বুঝেছেন আশা করি? যত দোষ নন্দ ঘোষ বলে ডাক্তারদের গালাগালি করবেন না।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় ওই চিকিৎসকের পোস্টে বন্যা বয়ে গিয়েছে কমেন্টের। সুগত মজুমদার নামে একজন লিখেছেন, ‘কোটি কোটি টাকা তহবিলে দান করলে সেটা তো আমাদের পকেট কেটেই তুলতে হবে। অনাচারের শেষ কবে হবে কে জানে!’

    একই সুর চিকিৎসক সংগঠনগুলির গলাতেও। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার বক্তব্য, ‘ওষুধের দাম লাগামছাড়া হওয়ার অবশ্যই অন্যতম কারণ এই নির্বাচনী বন্ড। যারা কোটি কোটি টাকা রাজনৈতিক দলে বিনিয়োগ করছে, তারা তো আর দানছত্র খুলে বসেনি। মুনাফা করার আশাতেই দিয়েছে। ওষুধের কেন্দ্রীয় মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইন বদল করায় বারবার মূল্য নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়েছে।’

    ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি কৌশক চাকীও একমত। তিনি বলেন, ‘বন্ডে টাকা ঢেলে ওষুধ কোম্পানিগুলি পরোক্ষে সরকারি নীতি প্রভাবিত করেছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়ার ফাঁকে তারা ব্যবসা করেছে চুটিয়ে। তার কুফল ভুগে চলেছে জনতা।’ সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কথায়, ‘এই টাকাটা তো কোম্পানিগুলো ঘুরপথে মানুষের পকেট কেটেই তুলবে।’
  • Link to this news (এই সময়)