জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রবিবার রাতে গার্ডেনরিচে আজহার মোল্লা বাগানে নির্মীয়মান বহুতল বাড়ির একাংশ ভেঙে গিয়েছে। ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। এলাকায় পৌঁছায় গার্ডেনরিচ থানা।ঘটনা সূত্রে জানা যাচ্ছে রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই এই নির্মীয়মান বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট বাড়ির উপর। এই ঘটনায় প্রচুর মানুষ ওই ধ্বংসস্তূপ চাপা পড়ে। তৎক্ষণাৎ গার্ডেনরিচ থানার পুলিস, দমকল বাহিনী, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্ধার কাজে হাত লাগায়।
সারারাত ধরে চলে উদ্ধার কাজ। এখনও পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।রাতেই ঘটনার পরিদর্শনে আসেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনাস্থল অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলের। তবে ঠিক কী কারণের জন্য এই ঘটনা তা এখনও স্পষ্ট না হলেও এলাকার মানুষের অভিযোগ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছিল বিল্ডিংটি এবং অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকায় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছিল।মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন ১৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন আহতদের মধ্যে ৭ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে এবং এক জনকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।ফিরহাদ বলেন, ‘আমি সারা রাত ছিলাম। দু’জন মারা গিয়েছে। এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। যাঁরা আটকে আছেন, দু’চার জনের সঙ্গে উদ্ধারকারীদের কথা হচ্ছে। জল এবং অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কংক্রিটের চাঙড়ের নীচে আর কারা আটকে আছেন, কেউ জানে না। একটা একটা করে চাঙড় সরিয়ে দেখা হচ্ছে’।তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘টালির চালের ছোট ছোট বাড়ির উপর বহুতল ভেঙে পড়েছে। যাঁরা আহত, সকলেই গরিব মানুষ। কেউ কেউ ওখানে আড্ডা মারতে এসেছিলেন। খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা।আমরা তাঁদের পাশে আছি। সারা রাত থেকেও দু’জনকে বাঁচাতে পারলাম না, এটাই আক্ষেপ’।এই বহুতল বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছিল এই কথা মেনে নিয়ে মেয়র জানিয়েছেন, ‘এ সব এলাকায় বাম আমল থেকে বেআইনি নির্মাণ চলছে। কারণ, সে সময়ে প্রশাসনের কাছ থেকে নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত না। অনুমতি জোগাড় করতে অনেক হেনস্থা হতে হত। বিএলআরও অফিসে গিয়ে পায়ের চটি ক্ষয়ে যেত। তাই প্রোমোটারেরা বেআইনি নির্মাণের পথে হাঁটতেন। আমরা আসার পর এই কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছি। তা-ও কেন কিছু কিছু লোক বেআইনি নির্মাণ করছেন, জানি না’।এই ঘটনার পরে ট্যুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, ‘কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের গার্ডেন রিচ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়ি ধসের বিপর্যয়ের কথা জেনে দুঃখিত। আমাদের মেয়র, দমকল মন্ত্রী, সচিব এবং পুলিস কমিশনার, নাগরিক পুলিস, অগ্নি ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক এবং দলগুলি (এনডিআরএফ, কেএমসি এবং কেপি দলগুলি সহ) বিপর্যয় মোকাবেলা করার জন্য সারা রাত কাজ করছেন। আমরা নিহতদের নিকটাত্মীয় এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেব। আমরা দুস্থ পরিবারের পাশে আছি এবং উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে’। গার্ডেনরিচের ঘটনা প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘গোটা কলকাতাকে অবৈধ নির্মাণের টেন্ডার তৃণমূল নেতারা দিয়ে রেখেছে। তৃণমূল নেতারা প্রতি স্কোয়ার ফিটে পয়সা নেয়, প্রতি স্কোয়ার ফিটে যদি আপনি পয়সা নেন তাহলে আপনার মেরুদন্ডে জোর থাকবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার, আজকে একটা ভেঙেছে ৩০ বছর পর আরও বাড়ি ভাঙবে। আপনি উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, চেতলা কোথায় যাবেন সব জায়গায় কাউন্সিলরের স্কোয়ার ফিটে টাকা নেয় এরা হচ্ছে স্কোয়ার ফিট কাউন্সিলর। এক এক জন কাউন্সিলরের এর সম্পত্তি দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এক কাউন্সিলর পি ডাব্লিউ ডি জায়গা দখল করে বাইপাস ধাবা বানিয়ে বসে আছে। জায়গাটাই অবৈধ সরকারই জায়গা। এইতো তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর’।