উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের একটি মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে, ১৫ বছরের বয়ঃসীমা পেরিয়ে গেলে আর কোনও বাস শহরে চালানো যাবে না। শহর কলকাতার পরিবেশ রক্ষার জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি পাঠিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে। আপাতত সেই নির্দেশ বলবৎ রয়েছে। তাই এ বছর কয়েক হাজার বাস বয়ঃসীমার কারণে বাতিল হওয়ার পথে। কিন্তু পরিবহণ সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ গণপরিবহণ বাঁচাও কমিটির দাবি ছিল, কোভিড সংক্রমণের সময় বেসরকারি বাস চলেনি। লকডাউনের কারণে যাবতীয় পরিবহণ পরিষেবা স্তব্ধ ছিল। অথচ সেই সময়কেও ১৫ বছরের মধ্যে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আর একসঙ্গে এত সংখ্যায় বাস বাতিল হয়ে যাওয়ার পর, বেসরকারি বাস মালিকদের অবস্থা এমন নয় যে, পকেটের টাকা খরচ করে সঙ্গে সঙ্গে এত সংখ্যায় নতুন বাস রাস্তায় নামানো যাবে। তাই সব দিক বিবেচনা করে আদালত এবং পরিবহণ দফতরকে বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানায় মঞ্চটি। বাস মালিকদের একাংশের দাবি ছিল, নতুন প্রযুক্তির বাস রাস্তায় নামাতে গেলে কমপক্ষে খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। কোভিড সংক্রমণের পর পরিবহণ শিল্পের যা অবস্থা ,তাতে বাস মালিকদের পক্ষে এত টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাস নামানো সম্ভব নয়। তাই বিকল্প কিছুর কথা ভাবতেই হবে সরকার পক্ষকে।
আদালতের রায়ে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৫ বছর বয়ঃসীমার মধ্যে থাকা বাসগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। তাই এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনকে চিঠি দিয়ে তাদের দাবি কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছিল মঞ্চটি। কিন্তু পরিবহণ দফতর এ বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য না করলে ১৮-২০ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল তারা। মূলত ভোট ঘোষণার কারণেই আপাতত সেই ধর্মঘট হচ্ছে না। এই ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল জয়েন কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং ইন্টার অ্যান্ড ইন্টার রিজিয়ন বাস অ্যাসোসিয়েশন। মঞ্চে তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের কারণে বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবা সাধারণ মানুষ এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের রমজান মাসের কারণে আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হয়েছে। আপাতত আমরা সব দিক বিবেচনা করে ধর্মঘট স্থগিত রাখলাম। কিন্তু জুন মাসের ভোট পর্ব মিটে গেলে আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারকে নতুন করে ভাবার কথা আমরা বলব।’’