এই সময়: শনিবার লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়েছে। তার আগে থেকেই অবশ্য অনেক দল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেনি প্রথম সারির রাজনৈতিক দলগুলি। এবারের ভোটে কেন্দ্রে কে ক্ষমতায় আসবে এনডিএ, নাকি ‘ইন্ডিয়া’—তা জানা যাবে ৪ জুন।কিন্তু যে দলই ক্ষমতায় আসুক না-কেন, তারা যাতে অন্তত পরিবেশের কথা মাথায় রেখে কিছু জরুরি পদক্ষেপ করে এবং তার জন্য এখন থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলি তুলে ধরে, সেই আর্জি জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন পরিবেশ আকাদেমির তরফ থেকে তাই দেশের সবক’টি প্রথম সারির রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে পরিবেশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে আবেদন করেছে। পাশাপাশি ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছেও চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের প্রচারের সময়ে পরিবেশবিধি মেনে চলে এবং সেজন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করে কমিশন।
শনিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচারে সিঙ্গল ইউজ় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা, বর্জ্য পৃথকীকরণের জন্য আলাদা বিন ব্যবহার এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে যত বেশি সম্ভব গণপরিবহণ ও কারপুল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ আকাদেমির তরফে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলিকে যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানে কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি তৈরি করা হলেও এখনও গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র থেকে শুরু করে তিস্তা, মহানদী, নর্মদার মতো নদীগুলি এখনও ব্যাপকভাবে দূষণের কবলে রয়েছে। যাতে নদীগুলিতে বর্জ্য ফেলার প্রবণতা বন্ধ করা যায়, তার আর্জি জানানো হয়েছে সবক’টি দলকে।
প্রচার হোক পরিবেশবিধি মেনে
পাশাপাশি জলাভূমি দেদার হারে বোজানো বন্ধ করা, অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলা বন্ধ করা, পাওয়ার প্লান্ট, স্পঞ্জ আয়রন কারখানার মতো যে সব বড় শিল্পসংস্থার দূষণে আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা, সামাজিক বনসৃজনের উপর গুরুত্ব দেওয়া, বেআইনি বাজি কারখানার দৌরাত্ম্য বন্ধ করার মতো বিষয়গুলিকেও যাতে তাদের ইস্তাহারে রাখা হয়, সেই আর্জি জানানো হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। দেশের ৪৩টি রাজনৈতিক দলের কাছেই চিঠি দিয়েছে আকাদেমি।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে সাম্প্রতিক অতীতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা উল্লেখ করে কমিশনকে আলাদা করে চিঠি দিয়েছেন বিশ্বজিৎ। তাঁর যুক্তি, ইতিমধ্যে জাতীয় পরিবেশ আদালত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বেআইনি বাজি কারাখানাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে। ওই কারখানাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য মুখ্যসচিব, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে দায়বদ্ধ করেছে আদালত। যাতে তাঁরা এই নির্দেশ কার্যকর করে লোকসভা ভোটে বোমা বিস্ফোরণ ও তার জেরে প্রাণহানি বন্ধের উদ্যোগ নেন, তা নিশ্চিত করারও আর্জি জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। পাশাপাশি ভোটের প্রচারে নির্বিচারে মাইক্রোফোন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছে পরিবেশ আকাদেমি।