• Prashant Kishor: 'বাংলায় বিজেপির ফল হবে সারপ্রাইজিং', কোন কোন ফ্যাক্টরে জোর দিয়ে এমন দাবি প্রশান্ত কিশোরের?
    এই সময় | ১৮ মার্চ ২০২৪
  • জনমানসে তাঁর প্রভাব রয়েছে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীকে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যেতে দেখেছে দেশবাসী। কথা হচ্ছে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২০২১ সালে। দাবি করেছিলেন, নিরঙ্কুশ ভোটে জয় পাবে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই দাবি মিলে গিয়েছে ১০০ শতাংশ। তাই তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও অনেকখানি। এবার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বাংলায় কেমন ফল করবে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস তা নিয়ে বড় দাবি করলেন প্রশান্ত কিশোর।সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভালো ফলের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তবে পিকে অবশ্য বিষয়টিকে ভবিষ্যদ্বাণী বলতে নারাজ। বিষয়টিকে জনগণের উপরই ন্যাস্ত করতে চান পিকে। প্রশান্ত কিশোরোর দাবি, এবার নির্বাচনের বাংলায় বিজেপি ভালো ফল করবে তৃণমূলের থেকে।

    পিকের কথায়, 'বাংলার বিজেপির ফল হবে সারপ্রাইজিং।' বলেন, 'এবার নির্বাচনে বিজেপি লোকসভায় একক বৃহত্তম দল হবে। অনেকে এই কথার জন্য় আমায় বিজেপির দালাল বলতে পারেন। কিন্তু এটা যদি আমি না অনুমান করতে পারি তাহলে নিজের কর্মক্ষেত্রে সৎ থাকতে পারব না।' নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে গিয়ে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'আমি কোনও দলের মুখপাত্র নই।'

    এখানেই প্রশ্ন উঠছে কীসের ভিত্তিতে এমন দাবি করেছেন প্রশান্ত কিশোর? বাস্তবে আদৌ তা সম্ভব? ২০১৯ সালে নির্বাচনের পর লোকসভা ভোটের পরে বাংলায় বিজেপির পরিস্থিতি ভালো ছিল না। বিধানসভা নির্বাচন হোক বা স্থানীয় সংস্থার নির্বাচন, সব ক্ষেত্রেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাংগঠনিক অভাবও ছিল স্পষ্ট। দলের কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্বও ছিল চোখে পড়ার মতো। উপনির্বাচনেও বিজেপিকে হারিয়েছে তৃণমূল। বিজেপ একাধিক বর্ষীয়ান নেতা ঘাসফুলে পা বাড়িয়েছেন। তাহলে কোথা থেকে এমন আশার আলো দেখছেন পিকে? নেপথ্যে কী কী যুক্তি দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর?

    ১. মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে এখনও পর্যন্ত ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করেননি মোদী

    পিকের যুক্তি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের উপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত আক্রমণ বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল জনমানসে। সেই কারণেই শেষ মুহূর্তে সব সমীকরণ উল্টে যায়। মমতার উদ্দেশ্যে মোদীর 'দিদি ও দিদি' তৃণমূল মা, মাটি ও মানুষের অবমাননার বিষয় করে তোলে। এবার সেই কৌশল বদলেছে বিজেপি। এখনও পর্যন্ত মোদী যতবারই এসেছেন রাজ্য়ে, কোনওবারই তাঁর গলায় মমতার বিরুদ্ধে ব্য়ক্তিগত আক্রমণ বা কটাক্ষ শোনা যায়নি। সব কিছুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে তৃণমূল দলকে।

    ২. অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভা পাঠানোর অঙ্ক

    রাজবংশী সম্প্রদায় থেকে এসেছেন অনন্ত মহারাজ। মতুয়া সম্প্রদায়ের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম তফসিলি জাতি হিসেবে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়। অনন্ত রাইকে প্রার্থী করা উত্তরবঙ্গে বিজেপির জন্য নিজেদের অধিকার কায়েমের জন্য ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সম্প্রদায়ের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। রাজবংশীরা উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে জয়ী হয়েছে চারটিতে। ২০১৯-এও বিজেপি এই আসনগুলির মধ্যে সাতটি জিতেছিল। আশা করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গে বিজেপি আটটি আসনে জয় পাবে।

    ৩. কংগ্রেস-সিপিএম ও তৃণমূলের পৃথত লড়াইয়ের সুবিধা

    বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের সমীকরণ খাটাচ্ছে না তৃণমূল। এরাজ্য়ে একলা লড়াই করছে তৃণমূল। পিকের মতে এই নির্বাচনে তৃণমূলের পৃথক লড়াই, কারও সঙ্গে জোট না বাঁধা বিজেপিকে শক্তিশালী করবে। ভোট বণ্টনের সুবিধাও পেতে পারে বিজেপি। সেক্ষেত্রে বাংলায় আসন বাড়তে পারে বিজেপি, মত পিকের।

    ৪. সিএএ বাংলার রাজনীতিতে বিজেপিকে শক্তিশালী করতে পারে

    সিএএ বাংলায় বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। শাহ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলায় সিএএ কার্যকর কথা দিয়েছিলেন। কার্যকর হয়েছে সিএএ। উচ্ছ্বসিত মতুয়া সম্প্রদায়। কথায় আচে, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক কোনও দলের ক্ষেত্রে সম্পদ। বাংলায় আনুমানিক এক কোটি আশি লাখ মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে যারা যে কোনও দলের খেলা ঘোরানোর ক্ষমতা রাখে। মতুয়া সম্প্রদায়ের মতো রাজবংশী সম্প্রদায়ও CAA-এর সুবিধা পেতে চলেছে। রাজবংশীরাও হিন্দু। এরা ১৯৭১ সাল থেকে নাগরিকত্ব পায়নি। এইভাবে বিজেপি প্রায় ১০ থেকে ১২টি আসনে সরাসরি এগিয়ে রয়েছে, দাবি করেছেন প্রশান্ত কিশোর।

    Lok Sabha Election 2024 Dates : সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন ২০২৪, শুরু থেকে শেষ এক নজরে জানুন

    ৫. হিন্দু ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টায় বিজেপি লাভবান

    পিকের মতে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম ভোটারদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই সিপিএম থেকে তৃণমূল সকলের তুষ্টির রাজনীতি করছে। প্রথমবারের মতো, বিজেপি ভিন্ন ধরনের রাজনীতি করছে। হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা মোট জনসংখ্য়ার প্রায় ৭১ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে হিন্দু ভোট পেতে মেরুকরণের রাজনীতি হয়েছিল। একাধিক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৫৫ শতাংশ হিন্দু বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই এবার বিজেপি হিন্দু আবেগের বিষয়গুলি ফোকাসে রেখেছে।

    ৬. তফসিলি জাতি বিজেপির পক্ষে

    হিন্দুদের মধ্য়ে তফসিলি জাতি রাজবংশী , মতুয়া রাজ্যের জনসংখ্য়ার ২৩ শতাংশ। এবার তাদের বৃহত্তর পরিসরে বিজেপির পক্ষে সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রশান্ত কিশোরের। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও চা শ্রমিক ও জঙ্গল সমহলের আদিবাসীদের ভোট পড়েছিল বিজেপির পক্ষে। আশা করা হচ্ছে সিএএ-এর বিভিন্ন সুবিধা মতুয়া ও রাজবংশীদের মানসিক দিকে প্রভাব ফেলবে। এসসি ভোট ব্যাঙ্ক অপ্রতিরোধ্যভাবে বিজেপির পক্ষে হবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে মনে করছে প্রশান্ত কিশোর।
  • Link to this news (এই সময়)