এই সময়, রামনগর: বাড়ির ছোট ছেলের জয়ের ব্যাপারে ১৬ আনা নিশ্চিত ছিলেন তিনি। তবুও এই প্রথম সৌমেন্দু অধিকারীর হয়ে ভোট প্রচারে নামলেন কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। পরিবারের তিন ছেলে ইতিমধ্যে বিজেপিতে যোগ দিলেও তিনি এখনও খাতায়কলমে জোড়াফুলে। রবিবার রামনগরের কালিন্দীতে কাঁথি লোকসভার বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দুর প্রচারে উপস্থিত ছিলেন তিনি।তবে এ দিন তিনি শুধু ছেলের প্রচার নয়, তাঁর পুরোনো দল তৃণমূলের সমালোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তাঁর মতো মানুষদের আর তৃণমূলের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। মঞ্চ থেকে বারবার প্রণাম করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিনি ও অধিকারী পরিবার এই এলাকার মানুষের কাছের লোক। মনে করিয়ে দেন, রামনগর কালিন্দীর লোকজন বরাবর তাঁকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এসেছে। ছোট ছেলের হয়ে বিজেপির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এগরায় অমিত শাহের মঞ্চে। এরপরেই তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি যোগের অভিযোগ উঠলেও এ ভাবে তৃণমূলের সমালোচনা করতে দেখা যায়নি।।
তবে বিজেপি প্রার্থী ছোট ছেলেকে জেতাতে তিনি যে মানুষের কাছে যাবেন তা তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তবে রবিবার দুপুরে রামনগরের কালিন্দীতে বিজেপির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি যেভাবে তৃণমূল ও তৃণমূল নেত্রীর পরিবারের সমালোচনা করলেন তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। শুধু তৃণমূলের সমালোচনা নয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসাও করেন তিনি। বলেন মোদী গুজরাতে যা উন্নয়ন করেছেন তার ছিটেফোঁটাও হয়নি এ রাজ্যে। ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে শুভেন্দু ও ছোট ছেলে সৌমেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলেও পরিবার কর্তা শিশির অধিকারী ও সেজ ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থেকে যান।
লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে পর্যন্ত দু’জনের কাউকে বিজেপির প্রকাশ্য মঞ্চে এ ভাবে দেখা যায়নি। তবে কাঁথি ও তমলুকের দুই তৃণমূল সাংসদের বিজেপি যোগ নিয়ে অভিযোগ তোলে তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রায় তিন বছর ধরে দুই সাংসদকে তৃণমূলের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার কয়েকদিন আগে দুই সাংসদ জানিয়ে দেন তাদের সঙ্গে আর তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী দু’দিন আগে দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন আর রবিবার বিজেপির মঞ্চে বিজেপি প্রার্থী ছোট ছেলে সৌমন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে তীব্র সমালোচনা করলেন তৃণমূলের। তিনি বলেন,‘এরা সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে পারে না। পেনশন দিতে পারে না। শুধু চুরি।’
তাঁর কথায় এত লুট এর আগে দেখিনি বাথরুমের পাশে একটা হেলিকপটার শোয়ার ঘরের পাশে একটা হেলিকপ্টার অথচ আপনাদের আমাদের গোরুর গাড়ি কেনার পয়সা নেই।’ তাঁর কথায় মিথ্যা মামলা করতে দেব না বলে সিপিএমকে বিদায় দিয়েছি। আর এখন বাড়িতে বাড়িতে ৩০টা ৪০টা মিথ্যা মামলা। সৌমেন্দুর নামে একাধিক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। যদিও বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারীর সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।
তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলেন ২০১৯ সাল থেকে অধিকারী পরিবার বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। তবু মুখোশ পরে ছিল। এবার মুখোশটা খুলে পড়েছে। তিনি বলেন অধিকারী পরিবারের রমরমা রাজনৈতিক ব্যবসায়। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা যে দলবদল করবে তা নতুন কিছু নয়। এটাই স্বাভাবিক। আমাদের একটাই প্রশ্ন, তৃণমূল যদি এতই খারাপ, এতদিন দলে ছিলেন কেন?