• গার্ডেনরিচে কেন বিপর্যয়, কারণ খুঁজল পুরসভা, বেআইনি নির্মাণ ‘সমূলে বিনাশের’ নির্দেশ ফিরহাদের
    আনন্দবাজার | ১৯ মার্চ ২০২৪
  • গার্ডেনরিচে বিপর্যয়ের ঘটনার পর বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কড়া
    পদক্ষেপ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূ্ত্রে খবর, পুর এলাকার কোথায় কোথায়
    বেআইনি নির্মাণ রয়েছে, তার তালিকা প্রস্তুত করে তা ভাঙার নির্দেশও দিয়েছেন মেয়র
    ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি, ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বহুতল বাড়িটি ভেঙে পড়ল কেন, তারও
    কারণ খুঁজে বার করা হয়েছে বলে খবর পুরসভা সূত্রে।

    পুরসভা সূত্রে খবর, বাড়িটি কত দিন ধরে তৈরি হচ্ছিল, কত
    তলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেই সব নথি বার করে দেখা হচ্ছে। আপাতত পুরসভার
    অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে যে, বাড়িটি যে সব সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি হচ্ছিল, তা
    অত্যন্ত নিম্নমানের। কম দামি রড,
    বালি, সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছিল বাড়িটি তৈরিতে।

    সোমবার বিকেলে ডিজি বিল্ডিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন মেয়র
    ফিরহাদ। পুরসভা সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে তিনি সার্কুলার জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
    সতর্ক করা হয়েছে পুর আধিকারিকদের। সূত্রে খবর, তাঁদের নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছে
    সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই এলাকা পরিদর্শনে বেরোতে বলা হয়েছে। তাঁরা যে সব এলাকার
    দায়িত্বে রয়েছেন, সেই সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
    দিনের দিনই রিপোর্ট তৈরি করে পরের দিনই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করতে
    হবে বলে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুর আধিকারিকদের। কড়া নির্দেশ, কোনও রকম অজুহাত
    চলবে না। বেআইনি নির্মাণ সমূলে বিনাশ করতে হবে। ভিত তৈরির সময়েই তা ভেঙে ফেলতে হবে
    বলে নির্দেশ গিয়েছে পুর আধিকারিকদের কাছে।

    বেআইনি নির্মাণ রুখতে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
    তুলেছেন বিরোধী কাউন্সিলরেরা। তাঁদের বক্তব্য, মাসখানেক আগে শহরে বেআইনি নির্মাণ
    নিয়ে বিভিন্ন এলাকার অবস্থা খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। পুরসভার তথ্য বলছে, শুধু
    ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডেই ৭০-এর বেশি বেআইনি নির্মাণ রয়েছে। ৮-১০টি বাড়ি রয়েছে, যেগুলি তৈরি হওয়ার
    পর অন্য বাড়ির উপরে হেলে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেআইনি
    নির্মাণ তৈরির সময় যে ধরনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন থাকে, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, তপসিয়া ও তিলজলায় তা যে কার্যত অসম্ভব, সে কথা বিল্ডিং
    বিভাগের আধিকারিকেরা প্রতিটি বৈঠকেই জানিয়েছিলেন। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কেউ সেই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করতে যেতে ইচ্ছুক নন,
    সেটাও মেয়রকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁরা। বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মেয়র একাধিক বার
    গর্জে উঠলেও বাস্তবে অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

    পুরসভার শাসকদল তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা অবশ্য সেই সব অভিযোগ
    মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, মেয়র কড়া পদক্ষেপই করছেন বেআইনি নির্মাণ রুখতে।
    পুরসভা সূত্রেও খবর, যে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ১৫ নম্বর বরোর
    অন্তর্গত। সেখানে গত তিন বছরে বেআইনি নির্মাণের জন্য ২০০-৩০০টি বাড়িতে নোটিস
    পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১৫০টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। বাকি বাড়িও ভেঙে
    ফেলা হবে। কিছু এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের কারণে বেআইনি নির্মাণ ভাঙা সম্ভব
    হয়নি। তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনেরও বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের সময় বলেই ঘটনাটি
    নিয়ে রাজনীতি করছেন বিরোধীরা।

    ফিরহাদ জানিয়েছেন, ১৫ নম্বর বরোর এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট
    ইঞ্জিনিয়ার ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ় করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে
    খবর, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে
    তাঁদের। সময়ের মধ্যে তাঁরা যদি সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে খবর পুরসভা সূত্রে।
    সূত্রের বক্তব্য, কোন ওয়ার্ডে কত বেআইনি বাড়ি আছে, তা চিহ্নিত করা তাঁদের দায়িত্ব ছিল। সেই কাজে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।
    দায়িত্ব পালন করেননি। ফিরহাদ বলেন, ‘‘বাড়িটা উঠল কী করে?
    আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি। টক টু মেয়রেও বলেছি। বেআইনি নির্মাণের
    শুরুতেই ধরব। বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে, মানুষ সেখানে থাকতে শুরু
    করলে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এ সব কেন হবে? শুরুতেই আটকে দিলে তো
    এ সব ঘটে না।’’ যদিও তিন আধিকারিক ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন যে, বাড়িটা অনেক ভিতরে ছিল। সেই কারণে তাঁদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)