• Calcutta High Court : মাদক কেসে ধরল যে পুলিশ, কোর্টে দুষ্কৃতীদের চিনতে পারল না তারাই
    এই সময় | ১৯ মার্চ ২০২৪
  • অমিত চক্রবর্তী

    কিছুদিন আগেই দলবেঁধে গিয়ে, নামধাম জেনে মাদক মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ট্রায়ালের সময়ে আদালতে তাদের চিনতেই পারছে না পুলিশ! পুলিশের এই ‘স্মরণশক্তি হ্রাসে’ অবাক হাইকোর্ট। যদিও এটা শুধুই স্মরণশক্তি হ্রাস, নাকি দুষ্কৃতীদের না-চেনার ভান, তা নিয়েও সন্দিহান আদালত। মূল সাক্ষী না চেনায় অভিযুক্তরা ছাড়া পাবে। এই অবস্থায় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ট্রায়ালে পুলিশ অফিসাররা ধৃতদের চিনতে না পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ, বিভাগীয় তদন্ত-সহ কড়া পদক্ষেপ করা হোক।শুধু তাই নয়, ১৬ জানুয়ারি থেকে ৭ মার্চের মধ্যে এমন অন্তত সাতটি জামিন বা আগাম জামিনের মামলায় হাইকোর্টের একাধিক ডিভিশন বেঞ্চের কাছে মাদক মামলায় পুলিশের এই ভোলবদল সামনে আসাকে ভয়ঙ্কর প্রবণতা হিসেবেই দেখছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টকে অন্ধকারে রেখে মাদক মামলায় অভিযুক্তদের জামিন বা আগাম জামিন পাইয়ে দেওয়ার চক্র গত বছরের নভেম্বরে সামনে আসে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের এক নির্দেশে।

    মূলত জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের সেই ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তারই ছায়া কলকাতা হাইকোর্টে। একের পর এক মাদক মামলায় পুলিশের ধৃতদের চিনতে না পারার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। মার্চেই নদিয়ার একটি মাদক মামলায় জামিনের আবদনের শুনানিতে বিচারপতি বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদনকারীর আইনজীবী নভনীল দে জানান, পুলিশের তল্লাশি দলের অধিকাংশ সদস্যই ট্রায়ালে অভিযুক্তকে চিনতে পারেননি।

    এতে আদালত অভিযুক্তকে চিনতে না পারা নদিয়ার ভীমপুর থানার আইসি সৌম্য দত্ত, সাব ইনস্পেক্টর তমালতরু সরকার, এএসআই বাবুল সাহা, কনস্টেবল হরপ্রসাদ বিশ্বাস, দুই সিভিক ভলান্টিয়ার শ্যামল ব্যাপারি ও রাকেশ পালের সম্পর্কে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এটা বিস্ময়ের যে, যে পুলিশ দল অভিযুক্তদের ঘটনাস্থল থেকে মাদক-সহ গ্রেপ্তার করল, নামধাম সব জানার পরও সেই অভিযুক্তদের চিনতে পারল না।

    এই আচরণের অর্থ, তাঁরা অসৎ কারণে অভিযুক্তদের চিনতে অস্বীকার করে থাকতে পারেন। তাঁদের স্মরণশক্তি এতটা কমে গিয়ে থাকলে তাঁরা পুলিশের চাকরির অযোগ্য। ওই সব সাক্ষীকে তাঁদের বক্তব্য আদালত আগামী শুনানিতে হলফনামার আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে নদিয়ার পুলিশ সুপারকে ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে হবে ২৮ মার্চের শুনানিতে।

    এখানেই শেষ নয়, ২৯ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার একই রকম একটি মামলায় রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চে জানায়, যে পুলিশ অফিসাররা অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি, তাঁদের সাসপেন্ড করে বিভাগীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ওই মামলাতেই বিচারপতি বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নোটিস জারির পরামর্শ দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় পুলিশের একই প্রবণতা দেখে ডিজিকে আদালত জানায়, যে কোনও থানার পুলিশ ট্রায়াল কোর্টে এমন ভাবে অভিযুক্তদের চিনতে না পারলে জেলা পুলিশ সুপারদের ওই পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।

    ১৬ জানুয়ারি একই ঘটনা সামনে আসায় ইসলামপুরের পুলিশ সুপারকে চাকুলিয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ও বেআইনি অস্ত্র রাখার ঘটনায় ধৃতদের চিনতে অস্বীকার করায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই ভাবে আদালতের নির্দেশ, মালদার ইংলিশবাজার, বহরমপুর-সহ বিভিন্ন থানা এলাকার এমন ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের পদক্ষেপ করে আদালতকে জানাতে হবে।
  • Link to this news (এই সময়)