'বেটি পরায়া ধন' ধারণা অতীত! সরকারি তথ্যে দত্তকের নয়া ট্রেন্ডে এগিয়ে 'লক্ষ্মীরাই'
এই সময় | ১৯ মার্চ ২০২৪
আগেকার কথায়, 'মেয়ে মানেই তো পরের ধন। বংশের দীপ জ্বালাবে কেবল ছেলেরাই। তারাই বংশের ধ্বজাধারী।' আজও এই ভাবনা সমাজের শিকর থেকে পুরোপুরি উপড়ে ফেলা যায়নি। হাজার রকম প্রকল্প, আইন, প্রচার সত্ত্বেও পুরোপুরি রোখা যায়নি কন্য়াভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা। আজও কন্য়া সন্তানের জন্ম দিলে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের শিকার হতে হয় বহু মহিলাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সামান্য হলেও আশার আলো চোখে পড়ছে। শুধু 'কার্তিক'-ই ই নয় ঘরে পা পড়ুক 'মা লক্ষ্মীর'-ও। ঘরে আলো করে আসুক মেয়েরাও এমন ভাবনা চিন্তাই পোষণ করেছেন হিন্দু দম্পত্তিরা, সরকারি তথ্য এমনটাই বলছে।আগে থেকে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা অপরাধ। তবুও বহু দম্পতি পুত্র সন্তানের অপেক্ষায় দিন গোনেন। মন্দিরে পুত্র সন্তানের লাভের আশায় মানতও করেন অনেকে। কারণই সেই বদ্ধমূল ধারণা। বংশরক্ষা থেকে শুরু করে বাবা-মায়ের শেষকৃত্য সবই তো ছেলের হাতে সঁপে দিতে চাওয়া! তাই পরিবারে 'বংশের প্রদীপ' সেই ছেলেকেই বিবেচনা করা হয়। আজও ভারতে কন্যা ভ্রূণ হত্যার ঘটনা মারাত্মক এক ব্যধি। অনেক সময় শিক্ষিত পরিবারেও মেয়েদের দাম নেই। কন্য়া সন্তান হওয়ার পর ফের অনেকে আবার পুত্র সন্তানের আশায় দিন গোনেন। তবে যাঁরা নিঃসন্তান তাঁরা সন্তান দত্তক নেন। নিজেদের পছন্দ মতো সন্তান বাড়িতে নিয়ে এসে বড় করে তোলেন মনের মতো করে। সন্তান না থাকায় কষ্ট লাঘব হয়। নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজে পাণ তাঁরা। সেক্ষেত্রে অবশ্য লিঙ্গ নিয়ে কোও সমস্য়ার কারণ নেই। সমাজের বদ্ধমূল ধারণা থেকে মনে হতেই পারে হয়তো বা ছেলে দত্তক নেওয়ার প্রবণতা বেশি হবে। তবে সরকারি তথ্য কিন্তু অন্য কথা বলছে। বাস্তবে উল্টো ছবি ধরা পড়ছে। বর্তমানে পুত্রের তুলনায় কন্যা দত্তক নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অর্থাৎ দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে ছেলেদের মতো মেয়েরাও।
সম্প্রতি এক সরকারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিগত বছরে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দত্তক নেওয়ার দিকে বেশি ঝুঁকছেন ভারতীয়রা। মোট ১১টি রাজ্যে তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২৩ সালে দত্তক নেওয়া হয়েছে ১৫,৪৮৬ জন শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেয়ের সংখ্য়া ৯৪৭৪ জন ও ছেলে ৬০১২ জন। পরিসংখ্য়ান থেকেই স্পষ্ট দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে মেদের সংখ্য়া অনেকটাই বেশি। কয়েক মাস থেকে ৬ বছর বয়সী এমন শিশুদের দত্তক নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে পঞ্জাব। এই রাজ্যে দত্তক নেওয়া মেয়েদের হার ছেলেদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
এক ঝলকে দেখে নিন কোন রাজ্যে কত শিশু দত্তক নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কতজন ছেলে ও কতজন মেয়ে (উল্লেখ্য তেলঙ্গানায় দম্পতিদের দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে বেশি পছন্দ)
রাজ্য - কত শিশু দত্তক নেওয়া হয়েছে - কতজন মেয়েকে দত্তক নেওয়া হয়েছে
তামিলনাড়ু - ১,৬৭১- ৯৮৫ জন মেয়ে
দিল্লি - ১,০৫৬ - ৫৫৮ জন মেয়ে
উত্তরাখণ্ডে - ৬৮৫ - ৪৭২ জন মেয়ে
অন্ধ্র প্রদেশ - ১,৪১৫ - ৮৩৫ জন মেয়ে
ওড়িশা - ২৯১ - ১৬৫ জন মেয়ে
তেলেঙ্গানা - ২৪২ - ৪৮ জন মেয়ে
পশ্চিমবঙ্গে - ২২৮ - ১১২ জন মেয়ে
যেহেতু দত্তক নেওয়ার সব পদ্ধতি আইনত নিয়ম মেনে হয় তাই অন্য ধরনের বিপদের সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ সন্তান হিসেবে যে মেয়েদের বেশি দত্তক নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। বিষয়টি দেখে অবাক হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। বিগত বছরগুলির পরিসংখ্য়ান আমূল বদলছে শেষ দুই বছরে। দেরিতে হলেও সমাজে মেয়েদের গুরুত্ব যে কতটা তা বুঝতে পারছেন মানুষ। আর সেই কারণেই সন্তান হিসেবে মেয়েদের দত্তক নেওয়ার হার বাড়ছে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। এখনও পর্যন্ত সরকারে তরফে মেয়েদের জন্য হাজার সুবিধা বা প্রকল্প এনে কন্যাভ্রূণ হত্য়ার মতো মারাত্মক ব্যধি চিরতরে নির্মূল করতে পারেনি সরকার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই আশার আলো দেখেছেন।