• কাঁটা তার পেরিয়ে এসে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলে দুই বৃদ্ধা
    এই সময় | ১৯ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়, কৃষ্ণনগর: মানবিকতার কাছে হার মানল কাঁটাতার! সৌজন্যে বিএসএফ-বিজিবি। বিনা পাসপোর্টে জিরো পয়েন্টে এসে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলেন বাংলাদেশের দুই বৃদ্ধা। দু’জনের বয়স সত্তরের কাছাকাছি। বিয়ের পর থেকে তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা বাংলাদেশের চোঁয়াডাঙা জেলার গয়েশপুরে। রবিবার রাতে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুধু আল্লাকে ডেকেছেন তাঁরা। যেমন করেই হোক শেষবারের মতো মায়ের মুখটা দেখার ব্যবস্থা করুক সর্বশক্তিমান।কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ পারে, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে আসার কোনও উপায় না পেয়ে তাঁরা হাজির হন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির ক্যাম্পে। এ পারেও একইরকম ভাবে চলতে থাকে চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত সোমবার সকাল ন’টা নাগাদ বিএসএফ ও বিজিবির উপস্থিতিতে ভারতীয় গ্রামের শেষমাথা কুলোপাড়া পেরিয়ে আত্মীয়দের নিয়ে দুই মেয়ে হাজির হন জিরো পয়েন্টে। সামান্য প্রতীক্ষার পরে কফিনে করে নিয়ে আসা হয় সাকিনা বেওয়া (৯২)র দেহ। বৃদ্ধার দুই মেয়ে-সহ অন্য আত্মীয়রা মৃত সাকিনাকে শেষবারের মতো দেখে লুটিয়ে পড়েন বালির চরে। কফিনের সামনে হাঁটুমুড়ে শুধু মায়ের জন্য প্রার্থনা নয়, ইচ্ছেপূরণ হওয়ায় তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানান আল্লাকে। সঙ্গে ধন্যবাদ জানান দু’পারের সীমান্তরক্ষীদের।

    কী ভাবে বরফ গলল? মাটিয়ারি বানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় দুই তৃণমূল সদস্য ছাত্তার মণ্ডল ও সাহিদুল মণ্ডল বলেন, ‘রবিবার রাতেই মৃতার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে এমন আর্জির কথা শুনে আমি রাতেই বিএসএফের সংশ্লিষ্ট এক পদস্থকে অনুরোধ করি। ওঁরা সোমবার সকাল সাড়ে ন’টায় হিউম্যানিটি গ্রাউন্ডে সাড়া দিয়ে মৃতদেহ জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। আমরা ফোন করে নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলি। এরপর বৃদ্ধার দুই মেয়ে ও তাঁদের আত্মীয়রা মৃতদেহ দেখে ফের বাংলাদেশের গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান।’

    সাকিনা বেওয়ার বাড়ি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার বানপুর গ্রামের মাটিয়ারি বাগানপাড়ায়। রবিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। বিবাহ সূত্রে ওপার বাংলার গ্রামে থাকেন তাঁর দুই মেয়ে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে সোমবার সকালে নদিয়ার মাটিয়ারি-বানপুর পঞ্চায়েতের কুলোপাড়া সীমান্তে জিরো পয়েন্টে বৃদ্ধার মৃতদেহটি রাখার ব্যবস্থা করেন বিএসএফ জওয়ানরা।

    তাঁর এক নাতি মহম্মদ জহিরুল বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যায় বয়সজনিত কারণে বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে বাংলাদেশে থাকা তাঁর দুই মেয়েকে খবর দিই। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এপারে আসা নিয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁরা। দুই মেয়ের যখন বিয়ে হয়েছিল তখন সম্ভবত এপার-ওপার যাওয়া আসায় তেমন বাধা ছিল না। আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে বিএসএফের স্থানীয় ক্যাম্পের আধিকারিকের কাছে আর্জি জানাই যাতে বাংলাদেশে থাকা বৃদ্ধার দুই মেয়ে-সহ অন্য আত্মীয়রা শেষবারের মতো চোখের দেখা দেখতে পারেন।’

    তিনি বলেন, ‘ওপার বাংলার চুয়াডাঙা জেলার গয়েশপুরে থাকেন ওঁর দুই মেয়ে সাবিনা বিবি ও সবেদা বিবি। বিএসএফের স্থানীয় ক্যাম্পের জওয়ানরা আমাদের মৃতদেহ নিয়ে কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় গ্রামের শেষমাথা কুলোপাড়া পার করে জিরো পয়েন্টে যেতে অনুমতি দেন। এপার থেকে আমি, আমার ভাই, আর আমাদের গ্রামের দুই প্রতিবেশী যুবক শুধু অনুমতি পেয়েছিলাম কাঁধে করে মৃতদেহ সীমান্তে নিয়ে যেতে। তবে কোনও মোবাইল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল না বলে ছবি তুলতে পারিনি।’
  • Link to this news (এই সময়)