• 'বেআইনি নির্মাণ সামাজিক ব্যাধি, দূর করতে পারছি না,' বলছেন খোদ মেয়র
    আজ তক | ১৯ মার্চ ২০২৪
  • বেআইনি নির্মাণকে সামাধিক ব্যাধি বললেন রাজ্যের পুর মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় আজ এই মন্তব্য করেন ফিরহাদ। যদিও এই দুর্ঘটনার দায় তিনি কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের ঘাড়েই চাপিয়েছেন।

    আজ গার্ডেনরিচের ভেঙে পড়া বহুতলের উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখতে যান ফিরহাদ। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'বেআইনি নির্মাণ বিল্ডিং বিভাগের দেখার কথা। কাউন্সিলরদের দেখার কথা নয়। কাউন্সিলরদের কথা ছেড়ে দিলাম। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দেখার কথা। কয়েকজনকে শোকজ করা হয়েছে। আমি এনিয়ে অনেক বলেছি। তবুও এটা কেন ওখানে হচ্ছিল আমি বুঝতে পারছি না। বেআইনি নির্মাণ এখন একটা সামাজিক ব্যাধি। দূর করতে পারছি না। কিন্তু চেষ্টা করে যাব। একটা বহুতল তো একদিনে হয়ে যায়নি। এটা অনেকদিন ধরেই হয়েছে। আরেকটা বিল্ডিং হেলে আছে, সেটাও ভাঙতে হবে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।'

    এদিকে তাঁর সঙ্গে গার্ডেনরিচকাণ্ডে ধৃত অভিযুক্ত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে শামস ইকবাল ও মহম্মদ ওয়াসিমকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবালের ঘনিষ্ঠ অভিযুক্ত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। একাধিক অনুষ্ঠানে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়। যদিও ছবি নিয়ে শামস ইকবালের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমের বিরুদ্ধে আগে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তিনি বেআইনি বহুতল নির্মাণ করছিলেন। বিরোধীরা আবার অভিযোগ করছে, পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আড়াল করার চেষ্টা করছেন শামস ইকবালকে।

     গতকালই এই বেআইনি ৬ তলা বিল্ডিংয়ের প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়। কী করে সকলের নজর এড়িয়ে জলাজমি বুজিয়ে বহুতল নির্মাণ হল? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এও জানা গেছে, ফ্ল্যাট তৈরিতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কলকাতা কর্পোরেশনের দ্বারা প্রস্তাবিত ১৬ মিমির পরিবর্তে ১০ মিমি রড ব্যবহার করা হয়। মাত্র দেড় কাঠা জমিতে একটি দোতলা কাঠামোর জন্য অনুমোদন নেওয়ার পরেও নির্মাতারা পাঁচতলা বিল্ডিং তৈরি করেছিল।

    জানা যায়, ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই বেআইনি বাড়িটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে নির্মাণ শুরু হয়। ১৫ মাসের মধ্যে পাঁচতলা বিল্ডিং তৈরি হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, মাঝপথে একসময় বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র জানায়, নির্মাণকাজ নিয়ে একাধিক অভিযোগ আসে। কোনও নিয়ম-কানুন না মেনে অবৈধভাবে পুকুর ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের কাজ হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

    গ্রেফতার হওয়া প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম পুলিশকেও জানান, সেরু নামে তাঁর এক পার্টনার ওই সময় ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ তদন্ত করছে, ভাঙা কংক্রিট সরিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কি না। অন্যদিকে সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকও মারা যান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ তলা বিল্ডিংটিতে ১৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছিল, তাতে প্রতি বর্গফুট ১৬০০। প্রতিটি ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাট বিক্রিও হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জমির মালিক নাসির আহমেদকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।
  • Link to this news (আজ তক)